ঢাকা, ১৭ জুন, ২০২৫ | আষাঢ় ৩ ১৪৩২
ঢাকা, ১৭ জুন, ২০২৫       
Shruhid Tea

গাজায় ইসরায়েলি ‘যুদ্ধাপরাধের’ বর্ণনা দিলেন জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ৩০ মে ২০২৫

গাজায় ইসরায়েলি ‘যুদ্ধাপরাধের’ বর্ণনা দিলেন জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর

গাজায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার। ছবি: সংগৃহীত

 

 

গাজায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবিক প্রধান বলেছেন, অঞ্চলটির মানুষদের জোরপূর্বক অনাহারে রাখছে ইসরায়েল। জোরপূর্বক অনাহারের মূল্যায়ন যুদ্ধাপরাধের সমতুল্য কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, তাই। এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ। স্পষ্টতই, এই বিষয়গুলো আদালতের রায় দেওয়ার বিষয় এবং শেষ পর্যন্ত ইতিহাসের রায় দেওয়ার বিষয়।'

টম ফ্লেচার বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, এর ফলে গাজার প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় পরিবর্তন এসেছে।

ফ্লেচার সম্প্রতি এই কথা বলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, সাহায্য প্রবেশের অনুমতি না দিলে গাজায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৪০০০ হাজার শিশু মারা যেতে পারে। এই দাবিটি পরে জাতিসংঘ প্রত্যাখ্যান করে এবং ভাষার ক্ষেত্রে 'সুনির্দিষ্ট' হওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে।

বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, প্রায় তিন মাস ধরে চলা ইসরায়েলি অবরোধের ফলে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি এবং আশ্রয়ের মতো সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গত সপ্তাহ থেকে গাজায় সীমিত আকারে সাহায্যের অনুমতি দেওয়া শুরু করে ইসরায়েল। অবরোধ আরোপের দুই সপ্তাহ পর আবার সামরিক আক্রমণ শুরু করে, হামাসের সাথে দুই মাসের যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটায়।

ইসরায়েল দাবি করে, এই পদক্ষেপগুলো গাজায় এখনো আটক ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে।

সম্প্রতি অবরোধ 'শিথিল' করার পর থেকে গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন-জিএইচএফ (একটি মার্কিন ও ইসরায়েলি সমর্থিত গোষ্ঠী) পরিচালিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে বিশৃঙ্খলার দৃশ্য দেখা গেছে। জাতিসংঘ জিএইচএফ-এর সাথে সহযোগিতা করবে না বলে জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক প্রধান ফ্লেচার বলেন, আমরা সীমান্তে খাবার মজুত দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সীমান্তের ওপারে অনাহারে থাকা লোকজনের ভেতরে (খাবার) প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা ইসরায়েলি মন্ত্রীদের বলতে শুনছি যে, এটি করা হচ্ছে গাজার লোকজনের ওপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য।

তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর উচিত অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের একটি বক্তব্য একেবারে প্রত্যাহার করা - যিনি বলেছিলেন, গাজার মানুষ 'এমনভাবে হতাশ হয়ে পড়বে যে, কোনো আশা এবং কিছুই খোঁজার থাকবে না' এবং 'অন্য জায়গায় নতুন জীবন' শুরু করার জন্য স্থানান্তরিত হতে চাইবে।

ফ্লেচার বলেন, আমরা আশা করব সারা বিশ্বের সরকার আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের পক্ষে দাঁড়াবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে খুবই স্পষ্ট।

তিনি নেতানিয়াহুর প্রতি আহ্বান জানান, 'এই ভাষা এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির এই নীতি... যেন কার্যকর না করা হয়।'

জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ ঘোষণা দেয়, তিনি গাজায় ইসরায়েলের উদ্দেশ্য 'আর বুঝতে পারছেন না'।

এই মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডার নেতারা ইসরায়েলি সরকারের প্রতি 'সামরিক অভিযান বন্ধ' করার এবং 'অবিলম্বে গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার' আহ্বান জানিয়েছেন। জবাবে, নেতানিয়াহু তাদের বিরুদ্ধে হামাসের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ করেন।

১৪ মে টম ফ্লেচার গাজায় গণহত্যা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান। কেন তিনি এই বিবৃতি দিয়েছেন জানতে চাইলে, তিনি গাজার মাটিতে থাকা সহকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন।

জাতিসংঘের শীর্ষ মানবিক কর্মকর্তা বলেন, 'তারা যা রিপোর্ট করছে, তা হলো জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির। তারা অনাহার, নির্যাতন এবং ব্যাপক মাত্রায় মৃত্যুর খবর দিচ্ছে।'

ফ্লেচার উল্লেখ করেন- রুয়ান্ডা, স্রেব্রেনিকা এবং শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে 'বিশ্ব পরে আমাদের বলেছিল যে, আমরা সময়মতো ব্যবস্থা নিইনি। আমরা কোনো সতর্কীকরণ বাণীও দেইনি। আর এখনই (জাতিসংঘের) নিরাপত্তা পরিষদ এবং বিশ্বের প্রতি আমার আহ্বান, '(গাজায়) গণহত্যা প্রতিরোধে আপনারা কি পদক্ষেপ নেবেন?'

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত