ঢাকা, ২৮ মার্চ, ২০২৪ | চৈত্র ১৪ ১৪৩০
ঢাকা, ২৮ মার্চ, ২০২৪       
banner

আসছে মহা বিপদ, ডুবে যাবে লন্ডন-ফ্লোরিডা-কায়রোসহ অনেক শহর!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ২০ ডিসেম্বর ২০২০

আসছে মহা বিপদ, ডুবে যাবে লন্ডন-ফ্লোরিডা-কায়রোসহ অনেক শহর!

প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি এন্টার্কটিকার ‘ব্রান্ট আইস শেল্ফ’-এ ফাটল শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। তারা সতর্ক করেছেন, খুব শীঘ্রই এই ফাটলের কারণে নিউ ইয়র্কের আয়তনের (৩০২.৬ বর্গমাইল) চেয়েও দ্বিগুণ আকারের একটি টুকরো মূল বরফের আস্তরণ থেকে ভেঙে যাবে। ব্রান্ট আইস শেল্ফ হলো ডওসন-ল্যাম্বটন গ্লেসিয়ার এবং স্ট্যানকম্ব-উইলস গ্লেসিয়ার টাং’র মাঝখানে কোটস ল্যান্ডের এন্টার্কটিক উপকূলীয় সীমানা।

যদিও ব্রান্ট আইস শেল্ফের বাকি অংশ এই ভাঙনে কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে যাই হোক, মানব সভ্যতা ও প্রাণীকূলের জন্য ব্যাপারটা যে মোটেও সুখকর নয় তা বলাই বাহুল্য!

এটা তো হওয়ারই ছিল! গত কয়েক দশক ধরেই বিজ্ঞানীরা বলে আসছেন, সীমাহীন মানবসৃষ্ট দূষণের ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) বেড়েই চলেছে। এর ধারাবাহিকতায় গলে যাবে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর জমাট বাঁধা বরফাঞ্চল, বেড়ে যাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। কে না জানে, পৃথিবীর এক ভাগ স্থল আর বাকি তিন ভাগ জল। কাজেই আমাদের প্রিয় আবাস-স্থল ডুবতে মোটেও সময় লাগবে না আর ডুবে গেলে কী হবে, ভাবলে গা শিউরে ওঠে!

ব্রিটিশ এন্টার্কটিক সার্ভের (বিএএস) হ্যালি স্টেশন থেকে গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই ব্রান্ট আইস শেল্ফ নিয়ে গবেষণা করে আসছেন। এর মধ্যে হিমবাহের অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুইবার গবেষণা কাজ বন্ধ রাখতেও হয়েছে। সাধারণত পৃথিবী, ভূমণ্ডল ও মহাকাশ বিজ্ঞান বিষয়ক এই গবেষণা সারাবছর ধরেই চলে।

‘ডেসটিনি’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল তাদের ‘স্ট্রেঞ্জ অ্যানোম্যালি ইন এন্টার্কটিকা’ ডকুমেন্টারি সিরিজে দেখিয়েছে, বরফের আস্তরণে ফাটল ধরাকেন্দ্রিক বিপদের হুমকি ও উদ্বেগ কেবল বরফাঞ্চল তথা এন্টার্কটিকার জন্যই নয়, গোটা পৃথিবীকেই এর জন্য ভুগতে হবে।

ডকুমেন্টারির বর্ণনাকারী বলছেন, পশ্চিম এন্টার্কটিকার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই অঞ্চলের অধিকাংশ বরফাস্তরণগুলোর নিম্নতল সমুদ্রপৃষ্ঠের অনেক নিচে অবস্থান করছে। কোনো কোনো জায়গায় তল সমুদ্রপৃষ্ঠের দেড় মাইল পর‌্যন্ত নিচে। যখন বরফ সমুদ্রপৃষ্ঠের এমন নিচের স্তর পর্যন্ত গিয়ে থাকে তখন সমুদ্র নিম্নতলের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে উষ্ণ জল সরবরাহ করতে পারে।

যখন নিম্নতল নড়াচড়া করে তখন সমুদ্রের পানি বরফের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এবং এই কারণে বরফের আস্তরণে ফাটল ধরে এবং টুকরো টুকরো হয়ে ভেসে যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি একটি সম্ভাব্য ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ার প্রথম ধাপ।

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ওই ফাটলের কারণে প্রায় ৬০০ বর্গমাইল আকারের বরফ টুকরো ভেঙে যেতে পারে এবং এটিই শেষ নয়। মূল আস্তরণ থেকে একটি টুকরো কোনোভাবে ভাঙলে ধারাবাহিকভাবে আরও অনেকগুলো টুকরো ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভাঙনজনিত বিপদ ও উদ্বেগের বিষয়গুলো ওই ডকুমেন্টারিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

বলা হচ্ছে, সমুদ্রের উষ্ণ পানির ধাক্কা ও চাপে সাধারণত হঠাৎ ফাটল ধরে এবং সেটি বড় আকারের ভাঙনের দিকে নিয়ে যায়। ঠিক এমনটিই ব্রান্ট আইস শেল্ফে ঘটছে।

বিজ্ঞানীদের উদ্বেগ, প্রতিবছর এরকম বরফের অনেক টুকরো মূল আস্তরণ থেকে ভেঙে যাচ্ছে। সেগুলো যতই সমুদ্রের দিকে ধাবিত হবে ততই গলতে থাকবে এবং এর পৃষ্ঠ তথা ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে যাবে।

অতিসম্প্রতি, জাতিসংঘের ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’র (আইপিসিসি) একটি রিপোর্ট বলছে, আগামী ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় এক থেকে তিন ফুট বেড়ে যাবে।

এদিকে, স্ট্রেঞ্জ অ্যানোম্যালি ইন এন্টার্কটিকা ডকুমেন্টারিতে বলা হচ্ছে, যদি পশ্চিম এন্টার্কটিকার সব বরফ গলে যায় তাহলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে প্রায় ১৬ ফুট।

আর যদি গোটা এন্টার্কটিকার বরফ গলে যায় তাহলে সমুদ্রের উচ্চতা হবে প্রায় ২১৬ ফুট। তাহলে কোন দেশের কী অবস্থা হবে সেই সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে ডকুমেন্টারি থেকে।

সত্যিই যদি সমুদ্রপৃষ্ঠর উচ্চতা ২১৬ ফুট বাড়ে, ফ্লোরিডা শহরকে নিয়ে গোটা আটলান্টিক সমুদ্রসৈকতই জলে মিলিয়ে যাবে। একই হাল হবে উপকূলীয় সব দেশ-শহর-জনপদের ক্ষেত্রেও। লন্ডন থাকবে সম্পূর্ণ পানির নিচে। ভেনিসকে পুনরুদ্ধার করতে হবে আড্রিয়াটিক সাগরের তল থেকে আর ডেনমার্কের বেশিরভাগ অংশেরই সলিল সমাধি হয়ে যাবে অনেক আগেই।
সান ফ্রান্সিসকোর পাহাড়গুলোকে মনে হবে ছোট ছোট কাগজের নৌকার মতো ভাসছে। মিশরের আলেজান্দ্রি্য়া ও কায়রো ভেসে যাবে ভূমধ্যসাগরীয় বানের তোড়ে।

বঙ্গবাণী/এমএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত