ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ | বৈশাখ ৬ ১৪৩১
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪       
banner

ধানের ব্লাস্ট রোগ কেন হয়? প্রতিকার কী?

কৃষি ডেস্ক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১০:২০, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

ধানের ব্লাস্ট রোগ কেন হয়? প্রতিকার কী?

ধানের লিভ ব্লাষ্ট। ছবি- সংগৃহীত

ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হলে তা মারাত্মক আকার নিতে পারে। রোগটি বহুরূপী। একই রোগ গাছের শরীরে আক্রমণের জায়গাভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিতি পায়। লক্ষণের তারতম্য দেখা যায়। পাতায় দেখা দিলে পাতাব্লাস্ট ডিম্বাকৃতি দাগ বড় হয়ে চোখের আকার নেয়। চোখের মাঝখানে সাদা ও ছাই রং ধারণ করলেও কিনার ঘেঁষে বাদামী রঙ বিরাজ করে।

একসময় পুরোপাতায় ছড়িয়ে পড়ে। পাতা শুকিয়ে গাছ মারা যায়। শিষের গোড়ায় ধরলে শিষ ব্লাস্ট। গাছের ঘাড়ে হয় বলে ইংরেজিতে বলে নেক ব্লাস্ট। আক্রান্ত  শিষ চিটা হয়ে সাদা আকার ধারণ করে। গাছের কাণ্ডের গিঁটে ধরলে গিঁট ব্লাস্ট বলে। আক্রান্ত জায়গাটা কালো হয়ে যায়। এক সময় ভেঙে পড়ে। শিষে খাবার যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ধান চিটা হয়ে যায়।

এ রোগের অনেক কারণ আছে। যেমন- আক্রমণ কাতর এলাকার চাষিরা ঠিকমত জাত বাছাই করে না। এখানে আক্রমণকাতর বলতে যে, আগের বছরে যেখানে-যেখানে এই রোগের প্রাদুর্ভাব হয়েছিল বা আক্রমণকাতর জাত লাগানো হয়েছিল। অথবা বছরের পর বছর জনপ্রিয় ব্রি ধান২৮ বা ব্রি ধান২৯ এর মতো জনপ্রিয় জাতগুলো লাগানো হচ্ছে।

মাঠের সব জমিতে একই জাতের ধান আবাদ করা যাবে না। বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন সময়ে কাটা পড়ে এমন ধরনের বেশ কিছু জাত নিয়ে পরিকল্পনা করে চাষ করতে হবে। তাহলে রোগবালাইয়ের প্রভাব বেশ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এই পরামর্শ শুধুমাত্র এই নির্দিষ্ট রোগের জন্য নয়।

সব ধরনের রোগ এবং পোকামাকড়ের জন্য প্রযোজ্য। তারপরেও আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। মাটি যদি বেলে হয় এবং শুকনো থাকে। মাটিতে পটাশ সারের ঘাটতি থাকে। জমিতে যদি নাইট্রোজেনের মাত্রা বেশি হয়ে যায় বা দিনের বেলায় বেশ গরম ও রাতের বেলায় ঠাণ্ডা পড়ে এবং ভোরে কুয়াশা।

তাহলেই বুঝতে হবে ব্লাস্টের আক্রমণ হতে পারে। এজন্য প্রতিষেধক হিসাবে অবশ্যই বীজের উৎস হতে হবে নির্ভরযোগ্য। সারের ব্যবহার সুষম হতে হবে। জমিতে পানি ধরে রাখতে হবে। ফসল নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। আক্রমণের শুরুতেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

যদি মনে হয় এ রোগের আক্রমণ হতে পারে তাহলে থোড় বা ফুলফোটার সাথে সাথে ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পারে।

ছত্রাকনাশক রোগের প্রাথমিক অবস্থায়ও প্রয়োগ করা চলে। ৭-১০ দিনের ব্যবধানের দু’বার স্প্রে করতে হবে।

শেষ কথা হলো এ রোগ থেকে মুক্তির এখন পর্যন্ত উপযোগী উপায় হলো আগাম সচেতনতা এবং সে মোতাবেক কৃষি তাত্ত্বিক ব্যবস্থা নেয়া। 

লেখক: জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস কৃষিবিজ্ঞানের ফেরিওয়ালা, সাবেক মহাপরিচালক বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, গাজীপুর।

বঙ্গবাণী/এমএস