ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ | বৈশাখ ১২ ১৪৩১
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪       
banner

শুকিয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের ফুল, দুশ্চিন্তায় ফরিদপুরের কালোসোনা চাষিরা

মেহেদী সোহেল বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ১০ মার্চ ২০২১

শুকিয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের ফুল, দুশ্চিন্তায় ফরিদপুরের কালোসোনা চাষিরা

পেয়াঁজবীজ ফুল, ছবি- বঙ্গবাণী

ফরিদপুরে কালোসোনা খ্যাত পেঁয়াজের বীজ চাষ এ বছর আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। রোপনের পর থেকে খেতের অবস্থা এ পর্যন্ত মোটামুটি ভালোই ছিলো বলে জানিয়েছেন ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ও অম্বিকাপুর ইউনিয়নের একাধিক পেঁয়াজবীজ চাষি। কিন্তু শেষ পর্যায় এসে কদম ফোঁটার পর ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে বলে জানাচ্ছেন অনেকেই। এতে ফলন হ্রাসের শঙ্কা করছেন তারা।

অম্বিকাপুর ইউনিয়নের অম্বিকাপুর ব্লকের (তারা মিয়া খাল সংলগ্ন) চাষি মো. ফারুক মুন্সি বলেন, আমি এ বছর এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করছি। শুরু থেকে এ পর্যন্ত খেতের অবস্থা বেশ ভালো, কিন্তু ফুল ফোঁটার পর কিছু ফুল পরিপুষ্ট না হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। এতে করে ফলনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরবে বলে শঙ্কা করছি। 

ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের গোপালপুর ব্লকের চাষি মো. মোস্তফা শেখও এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করছেন। তিনিও একই কথা বলেন। 

গোপালপুর ব্লকের অপর চাষি মুন্নাফ শেখ দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজবীজ চাষ করছেন। তিনি বলেন, আমাদের এলাকার মধ্যে আমার খেত সবার থেকে ভালো হয়েছে বলে আমার প্রতিবেশি চাষি ভাইয়েরা বলছেন, আমার কাছেও মনে হচ্ছে যে আমার খেত খুব ভালো হচ্ছে, কিন্তু কদম ফোঁটার পর ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই পেঁয়াজ দানাবীজ চাষে প্রচুর খরচ, ফুল শুকিয়ে যদি ফলন ব্যহত হয় তাহলে ক্ষতির মুখে পরতে হবে। একই কথা বলেন এই বব্লকের আরেক চাষি আজিজুল শেখ।

এ বিষয়ে গোপালপুর ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. ইলিয়াস শেখ বলেন, পেঁয়াজবীজ ফুল শুকিয়ে যাওয়া একটি গুরতর সমস্যা, এতে ফলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পরে। এই সমস্যাটা মুলত পরাগায়নের অভাবে হয়ে থাকে। 

ইলিয়াস শেখের সঙ্গে আরেকটু যোগ করে অম্বিকাপুর ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আফতাব আলি মোল্লা বলেন, এই সময়ে মাঠে প্রচুর কালোজিড়া ও ধনিয়া ফুল ফুটেছে। কালোজিড়া ও ধনিয়া খেতে প্রচুর মৌমাছি দেখা যাচ্ছে কিন্তু পাশেই পেঁয়াজবীজ খেতে মৌমাছি আসছেনা, কারণ পেঁয়াজবীজ ফুল থেকে মৌমাছির কাছে কালোজিড়া ও ধনিয়া ফুল বেশি পছন্দ। তবে কালোজিড়া ও ধনিয়া ফুল শেষ হয়ে গেলে মৌমাছি আবার পেঁয়াজবীজ ফুলে ফিরে আসবে, তখন পরাগায়ন বারবে। 

ফরিদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে পেঁয়াজের ফুল শুকানো বিষয়ে কথা বললে তিনি বলেন, এমন সমস্যা অতিরিক্ত রাশায়নিক বালাইনাশক ব্যবহারের ফলে হতে পারে। গত সোমবারে আমরা অম্বিকাপুর ব্লকের বেশ কিছু খেত পরিদর্শন করেছি, তখন এমন সমস্যা আমাদের চোখে পরেনি। তবে এখন আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম, আমরা বিষয়টি দেখবো ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফরিদপুর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হযরত আলী পেঁয়াজবীজ ফুল শুকিয়ে যাওয়া বিষয়ে বলেন, এরই মধ্যে আমি কিছু পেঁয়াজবীজ খেত পরিদর্শন করেছি। বেশিরভাগ খেতের মাটিতে রস নেই, গাছে পাতা নেই। যে কারণে ফুল প্রয়োজনীয় খাদ্য পাচ্ছেনা, এসব কারণে ফুল শুকিয়ে যেতে পারে। আবার গত কয়েকদিন ধরে হঠাৎ করে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, এটাও একটা কারণ হতে পারে। এছাড়া বেশিরভাগ চাষিরা বিশুদ্ধ জাতের পেঁয়াজ বীজের চাষ করেন না, জাত বিশুদ্ধ না হলে ফলনের উপর এধরনের প্রভাব পরে। তবে সমস্যা যাই হোক আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।   

স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস্ লিঃ এর ক্রপ কেয়ার ডিভিশন ফিল্ড ম্যানেজার মোঃ সিরাজুম মনির এ বিষয়ে বলেন, অল্টারনারিয়া পোরি নামক ছত্রাক দ্বারা পাপর্ল ব্লচ রোগ হয়। এতে ফুল  শুকিয়ে যায়। ঘন কুয়াশা বা বৃষ্টি পাত হলে এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আমাদের ম্যানকোসিল ৭২ ডব্লিউ পি ২০গ্রাম / ১০লিঃ পানি ও কাজিম ৮০ ডব্লিউ জি ১০ গ্রাম / ১০ লিঃ পানিতে মিশেয়ে ছিটালে এই রোগ দমন করা যায়। এছাড়াও পেঁয়াজ এ ফুল বা কদম আসার পর থ্রিপস বা রস চুষে খাওয়া পোকা ও মাকোড়ের আক্রমণ হয়। ইমপেল ২০এস এল ১০মি.লি./ ১০ লিটার পানি ও টক্সিমাইট ১.৮ই সি ১৫মি.লি./১০লি. পানিতে  মিশেয়ে স্প্রে  করলে এই পোকা দমন হয়। 

বঙ্গবাণী/এমএস