ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ | বৈশাখ ১৪ ১৪৩১
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪       
banner

তিনি শুধুই ডিসি নন, একজন নিরলস সেবক

মেহেদী সোহেল বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৭:০৪, ৬ নভেম্বর ২০২০

তিনি শুধুই ডিসি নন, একজন নিরলস সেবক

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অতুল সরকার

কর্মই যেন তাঁর একমাত্র সাধনা, ধ্যান ও জ্ঞান। কর্ম পাগল এই মানুষটি সকাল থেকে গভীর রাত অবধি সমাজের নানা প্রতিকূলতার সমাধানে সর্বোচ্চ চেষ্টা করার পাশাপাশি তাঁর উপর অর্পিত সকল সরকারি দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে চলছেন। কোন বিশেষ প্রয়োজনে সে রাত বা দিন যখনই হোক তাঁর সাথে দেখা করতে চেয়ে সুযোগ পাওয়া যায়নি এমন ঘটনা বিরল। 

তাৎক্ষণিকভাবে ফোন ধরতে না পারলে পরবর্তীতে ফোন ব্যাক করেন, সাক্ষাৎ প্রত্যাশী মানুষের কুশলাদি জিজ্ঞাসা করে তাদের সমস্যা বা দুর্ভোগের কার্যকর সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা করা, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী, অসহায় ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া,  চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা বিশেষত করোনা কালীন সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের সহযোগিতা প্রদান সহ  জেলা প্রশাসনের পুরো টিমকে নিয়ে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে কাজ করা, মৃত মানুষের সৎকারের ব্যবস্থা করা, বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার সময় যখন সারা দেশে লকডাউন অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয় সে সময় দিনরাত পালাক্রমে দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে ঘরে ঘরে  তিনি ও তার টিম  সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগৃহীত বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন। 

সর্বশেষ বানভাসি মানুষদের মাঝে রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে শুকনো খাবার, গবাদিপশুর খাবারসহ তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাসহ সরকার প্রদত্ত সকল ধরনের সহযোগিতা অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে তাদের কাছে পৌছানো নিশ্চিত করেছেন। সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ডিজিটাইজেশনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। ই নথি ব্যবস্থাপনায় পরপর ০৬( ছয়)বার সারাদেশে প্রথম স্থান অর্জন সহ নানা ধরনের উদ্ভাবনীমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছেন। 

ভূমি অধিগ্রহণের টাকা যাতে মানুষ বিনাা ভোগান্তিতে দ্রুততার সাথে পেতে পারেন সে সেজন্য বর্তমান ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এই অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন। চান্দিনা ভিটি ও অর্পিত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সহ বিভিন্ন ডিলিং লাইসেন্স নবায়নেও যাতে মানুষের কোনরূপ ভোগান্তিতে পড়তে নাা হয় সেজন্য ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি অ্যাপস তৈরি সহ সার্বিক কর্মকাণ্ড অনলাইনের মাধ্যমে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন। 

রেকর্ড রুম থেকে পর্চা সরবরাহ সহ নামজারির সকল কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে সম্পাদিত হচ্ছে। বর্তমানে মানুষ ঘরে বসেই তার কাঙ্ক্ষিত সেবা পেয়ে যাচ্ছেন। প্রচন্ড জনবল সংকট থাকা সত্বেও সেবা প্রত্যাশী জনগণ কে সেবা দেওয়ার জন্য ভূমি (রাজস্ব) প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। 

সরকারের সকল এজেন্ডা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সমাজের আপামর মানুষের সার্বিক কল্যাণে নিরন্তর ব্যস্ত থাকেন এই জেলাা প্রশাসক ও তার টিম যা টিম ফরিদপুর নামে ইতিমধ্যে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেছে। হ্যাঁ এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তিনি হচ্ছেন ফরিদপুর জেলার সম্মানিত জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব অতুল সরকার। 

মাত্র এক বছর কয়েক মাস হয়েছে তিনি এই জেলায় এসেছেন। তার আগমনের পর পরই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে মতবিনিময়কালে দেখা গেছে নির্ভীক, নিরহংকার ও সদালাপী এই মানুষটির মনে রয়েছে নানান স্বপ্ন ও উদ্ভাবনী ভাবনা যা তিনি ফরিদপুরে বাস্তবায়ন করার জন্য বদ্ধপরিকর। 

শিল্প-সাহিত্য এবং শিক্ষা ও সুকুমারবৃত্তির চর্চায় ফরিদপুরকে দেশের একটি অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জেলায় পরিণত করতে চান তিনি। ২০১৯ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত সভায় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় ৯০ ডিগ্রি অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা রেখার ছেদবিন্দুতে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যবেক্ষণ টাওয়ার’ ও ‘সাইন্স সিটি’ গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয়ার মাধ্যমে তিনি শুরু করেন তাঁর উন্নয়ন ভাবনা যা বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন। 

জনপ্রতিনিধি ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা প্রতিরোধে ব্যাপক প্রচারণা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ, নদী ভাঙ্গন রোধে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন প্রকল্পের  সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সাথে নিয়ে সরকারের কাছে আরো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণণ প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন যার মধ্যে মধুখালী উপজেলায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ এর স্মৃতি বিজড়িত বসতবাড়ি রক্ষা ও আলফাডাঙ্গা উপজেলাার বিস্তীর্ণ এলাকাকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার প্রস্তাব ‌অন্যতম। 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রবর্তিত ভিশন ২০২১, ভিশন ২০৪১, র্নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৮ এবং করোনা প্রতিরোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা সহ সরকারের সকল নির্দেশনা ও নীতির আলোকে গৃহীত ও বাস্তবায়নাধীন নানামুখী পদক্ষেপের কারণে সমগ্র ফরিদপুর জুড়ে ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে এক নতুন উদ্দীপনা। সকলের মনে সঞ্চারিত হয়েছে নতুন দিনের নতুন আলো তথা উন্নত ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশের দৃশ্যমান স্বপ্ন। শিক্ষার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তিনি নতুন একটি স্লোগান তৈরি করেছেন আর তা হল হলো ‘আমার গ্রাম আমার শহর ফরিদপুর হবে শিক্ষানগর।’ 

মুজিব বর্ষের অঙ্গীকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য ভূমি ও গৃহের সংস্থান,  প্রতিটি ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু পাঠাগার গড়ে তোলা, উপজেলা পরিষদে মুজিববর্ষ পার্ক তৈরি করার পরিকল্পনাসহ মুজিববর্ষকে স্মরণীয় করে রাখার লক্ষ্যে ফরিদপুর জেলার সকল বিভাগের সমন্বয়ে ১০০+ উদ্যোগ ( 100+ Initiatives) গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ফরিদপুর জেলায় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সমূহকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করার বিশেষ উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে‌ যার মধ্যে ঐতিহ্যবাহী অম্বিকা ময়দানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্স অন্যতম। 

গত এক বছরে বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন বহুবিধ কাজের মধ্যে নিম্নে  উল্লেখযোগ্য কয়েকটির বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হলো।

১. জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজঃ 

ফরিদপুর জেলা একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। শিক্ষার প্রতি ফরিদপুরবাসীর অনুরাগ সুবিদিত। এ জেলাটি সুপ্রাচীন এবং জনবহুল হওয়া সত্ত্বেও জেলা শহরে মাত্র দুটি সরকারি স্কুল রয়েছে। এছাড়া ব্যাপক চাহিদা থাকলেও কাঙ্ক্ষিতমানের স্কুল না থাকায় প্রতি বছর সরকারি স্কুলগুলোর ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত কয়েকগুন শিক্ষার্থী ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এ মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে অনেক শিক্ষার্থী হতাশায় নিমজ্জিত হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে এ জেলায় মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবের বিষয়টি অনুভূত হয়ে আসছে এবং বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী-অভিভাবক তথা সুধীসমাজের নিকট হতে বিষয়টি বারবার উত্থাপিত হয়েছে এবং প্রস্তাবনা এসেছে। অধিকন্তু ফরিদপুরকে শিক্ষানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর বদ্ধপরিকর। এই প্রেক্ষাপটে সরকারের অন্যতম এজেন্ডা মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন ও ভিশন-২০৪১ অর্জনে যোগ্য নাগরিক গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর কর্তৃক ১ জানুয়ারি, ২০২০ শহরের প্রাণকেন্দ্র ঝিলটুলীতে ০.৬৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জেলা প্রশাসন স্কুল এন্ড কলেজ, ফরিদপুর’। ইংরেজী ভার্সনে পরিচালিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিকভাবে প্লে হতে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম পলিচালিত হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা হতে পাঠদানের অনুমতিক্রমে আগামী ২০২১ সাল হতে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভার্সনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

 ২. করোনা ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিলিফ অপারেশন সফটওয়্যারঃ 

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে  বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং এর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা। এই করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সঠিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, জনসচেতনতা তৈরি, মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনাসহ সার্বিক কর্মকান্ড সূচারুভাবে সমন্বয় করার উদ্দ্যেশ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ‘ফরিদপুর করোনা ম্যানেজমেন্ট এন্ড রিলিফ অপারেশন’ (www.fcmro.com) শীর্ষক একটি ওয়েবসাইট প্রণয়ন করা হয়েছে। এই ওয়েবসাইটে একদিকে যেমনব্যক্তিদের তালিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে অপরদিকে এ জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, তাদের টেস্ট সম্পর্কিত তথ্য, করোনা থেকে মুক্তি প্রাপ্তদের সংখ্যা, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ও হোম  কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়মিত আপডেট করে সংরক্ষন করা হয়ে থাকে। এছাড়া, ডাটাবেজ প্রণয়ন এর মাধ্যমে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা বিতরণের তথ্য-প্রমাণও নিয়মিত হালনাগাদ করা হয়। করোনায় সংক্রমিত অথবা মানবিক সহায়তা প্রয়োজন এমন যে  কোন ব্যক্তি তার বক্তব্য এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অথবা ওয়েব সাইটে প্রদত্ত হট লাইনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের সাথে সহজেই যোগাযোগ করতে পারছেন। উপজেলাভিত্তিক করোনা আক্রান্তের তথ্য থাকায় কোন নির্দিষ্ট এলাকাবাসীও নিজেদের অবস্থান সম্পর্কে ধারনা লাভ করে সে অনুযায়ী নিজেরা সচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন। কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি এই ওয়েবসাইটটি ইতোমধ্যে জেলায় ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে।  এই ওয়েবসাইটটি এমনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে যাতে পরবর্তিতে অন্য কোন দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। 

৩. অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টারঃ 

বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে এক সময়ের পিছিয়ে পড়া ফরিদপুরও ক্রমশ একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের সমন্বয়, বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও সেমিনারসহ নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ডও একই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রমবর্ধিঞ্চু চাপ মোকাবেলায় ফরিদপুরে একটি ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কনভেনশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করা রয়েছে যা ইতিমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে বিভিন্ন জাতীয় দিবস, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানাদি, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন ও অন্যান্য আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা সহজতর হবে। 

৪. QR কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ডঃ 

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টিআর, কাবিটা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, কর্মজীবি ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারের বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রম বেষ্টনি রয়েছে। তাছাড়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকার তাৎক্ষণিক মানবিক সহয়তা প্রদান করে থাকে। জেলা পর্যায়ে সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন। সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, একই ব্যক্তি যাতে একাধিক সুবিধা ভোগ করতে না পারে এবং উপযুক্ত ব্যক্তি যাতে কোনভাবেই সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেলক্ষ্যে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর উপকারভোগীদের অনলাইন ডাটাবেজ তৈরি করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রত্যেক উপকারভোগীর জন্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে QR কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। বর্তমানে জেলার সকল উপজেলায় QR কোড সম্বলিত মানবিক সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে ওএমএস ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল এবং করোনা আক্রান্তদের মানবিক সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে। এ জেলার সকল সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী এবং ত্রাণ কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে এই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  

৫. ব্র্যান্ডিং মেলাঃ 

ফরিদপুর জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য পাট। পাট ও পাটজাত বিভিন্ন দ্রব্যের স্থানীয় ও বৈদেশিক বাজার সৃষ্টি করে পাটকে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত করা, পাটচাষী ও উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ফরিদপুর জেলায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত হয় মাসব্যাপী ‘ব্র্যান্ডিং মেলা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’কে উপজীব্য করে জেলার সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ প্রাঙ্গনে আয়োজিত এই মেলায় ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার, ‘ব্র্যান্ডিং কর্নার’, ‘ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার’, ‘প্রতিবন্ধিদের জন্য ‘সুবর্ণ নাগরিক কর্নার’, ‘এসডিজি কর্নার’সহ মোট ১২০টি স্টল অংশগ্রহন করে। মেলায় মাসব্যাপি জেলার বিভিন্ন পাটকল ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য প্রদর্শন এবং বিক্রয় করেন। এছাড়াও মেলায় মাসব্যাপী জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর উপস্থাপনা এবং শিশুকিশোরদের জন্য বিভিন্ন বিনোদনমূলক কর্নার এবং রাইডের ব্যবস্থা ছিল। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা ইতোমধ্যে ফরিদপুরবাসীর প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে। আগামী বছরগুলোতে এই মেলার বৈচিত্রতা এবং কলেবর  অধিকতর বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।

৬. অটোমেটেড কমপেন্সেসন পেমেন্ট সিস্টেমঃ 

জেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্পাদিত গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্যতম প্রধান হচ্ছে উন্নয়ন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘ভূমি অধিগ্রহণ’ করা  এবং যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয় তাদের জমির ও স্থাপনার ক্ষতিপূরণ বাবদ নির্ধারিত অর্থ স্বচ্ছতার সাথে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা প্রদান করা। ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ভোগান্তি হ্রাসে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ন দূরীকরনে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার TVC (Time,Value, Cost) কমানোর অভিপ্রায়ে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর কর্তিক অনালাইনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরনের সফটওয়্যার Automated Compensation Payment System (www.la.faridpur.gov.bd) প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি  তার ক্ষতিপূরনের চেক কোন পর্যায়ে রয়েছে তা ঘরে বসেই জানতে পারছেন, কোন অভিযোগ থাকলেও তা সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আনা সম্ভব হচ্ছে এবং  চেক প্রাপ্তির তারিখ ও সময়ও মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া, দাগসূচি ও খতিয়ান নাম্বার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রোয়েদাদ এবং চেক প্রস্তুত হওয়ার কারণে একদিকে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে অপর দিকে ভুলেও সম্ভাবনাও প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। 

৭. মিট দ্য ডিসিঃ 

শিক্ষার আলোকবর্তিকা সকলের দোরগোড়ায় পৌছে দিতে এবং সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তৃনমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর। এরই ধারাবাহিকতায় ‘আমার গ্রাম আমার শহর-ফরিদপুর হবে শিক্ষা নগর’ স্লোগানকে হৃদয়ে ধারণ করে ফরিদপুর জেলা প্রশাসনের ব্যতীক্রমী ও অনন্য উদ্যোগ ‘মিট দ্য ডিসি’। এটি মূলত ফরিদপুর জেলা সদর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেরা ১০ জন শিক্ষার্থীর জেলা প্রশাসকের সাথে সাক্ষাত ও মতবিনিময়ের ক্ষেত্র। ফরিদপুর জেলার পৌর একাকার আওতাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতিমাসে মেধায়, মননে, পোশাকে, আচরনে, শৃঙ্খলায়, নেতৃত্বে, সাধারন জ্ঞানে, হাজিরায় ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহনের ভিত্তিতে শ্রেণিভিত্তিক কৃতি শিক্ষার্থী বাছাই করা হয়। পরবর্তিতে জেলা পর্যায়ে বাছাই কমিটির মাধ্যমে এসকল শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে সেরা ১০ জন নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ‘মিট দ্য ডিসি’। অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের তার স্বাক্ষরিত কার্ড ও উপহার প্রদান করেন। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের বিকাশ ও সমাজে বিশেষত শিক্ষার্থীদের মাঝে সুস্থ ধারার মেধাভিত্তিক প্রতিযোগিতা গড়ে তোলার লক্ষ্য‌ লক্ষ্য নিয়ে প্রতিমাসে জেলাতে জেলা প্রশাসকের সাথে এবং উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে এই কর্মসূচি Meet the DC ও Meet the UNO নামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। 

৮. আট আনায় জীবনের আলো কেনাঃ 

কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তোলা এবং সংস্কৃতির পরিপূর্ণ বিকাশের উজ্জ্বল ক্ষেত্র হচ্ছে একটি গ্রন্থমেলা। গ্রন্থমেলার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও বইয়ের মধ্যে তৈরি হয় এক নিবিড় বন্ধন যার সফল প্রয়োগ ঘটেছে ‘আট আনায় জীবনের আলো কেনা’ শীর্ষক একটি ব্যতিক্রমী উদ্ভাবনীমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ফরিদপুর জেলায় প্রথমবারের মতো গ্রন্থ মেলা আয়োজনের মাধ্য দিয়ে। ফরিদপুরে অধ্যায়নরত প্রতি শিক্ষার্থীর নিকট থেকে তাদের সঞ্চিত টিফিনের অর্থ থেকে মাসে মাত্র ৫০পয়সা (আট আনা) নিয়ে এই গ্রন্থমেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এই ব্যতিক্রমী কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অনুভব করতে সক্ষম হচ্ছে যে তাদের অর্থের বিনিময়ে একটি গ্রন্থমেলার আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে সংগৃহীত অর্থ সাথে আরো অর্থযোগ করে তা দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি হিসেবে প্রদান করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের সম্মাননা জানানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রমটিকে স্থায়ী রূপ দেয়ার জন্য ‘জ্ঞানের আলো ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যার মাধ্যমে প্রতিবছর গ্রন্থমেলার আয়োজন, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচন করে তাদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। চলতি বছর ঐতিহ্যবাহী অম্বিকা ময়দানে ১-৮ ফাগুন (১৪-২১ ফেব্রুয়ারি)  অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে ‘আট আনায় জীবনের আলো কেনা’ থিমের উপর ভিত্তি করে আয়োজিত হয় ফরিদপুর গ্রন্থমেলা। জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজন করা হলেও এ গ্রন্থমেলার সত্তা তুলে দেয়া হয়েছে এ জেলার সকল শিক্ষার্থীদের নিকট। এর মূল উদ্দ্যেশ্য এই মেলাকে শিক্ষার্থীদের প্রাণের মেলায় পরিণত করে শিক্ষার্থী ও গ্রন্থমেলার মধ্যে নিবিড় বন্ধন তৈরি করা যাতে জ্ঞান পিপাসু শিক্ষার্থীরা বই পড়ার মধ্য দিয়ে তাদের অন্তরের দিব্যনয়ন বিকশিত করতে পারে। মেলায় ৩১টি স্টলের পাশাপাশি আলোচনা সভা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, নৃত্য ও সঙ্গীতানুষ্ঠানেরও আয়োজন ছিল। এই মেলা প্রতিবছর আরো বড় পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

৯. ভূমিহীনদের ভূমি ও গৃহ প্রদান:

 জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র অঙ্গীকার ‘মুজিববর্ষে দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না’ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর জেলার দুই হাজার (২০০০ জন) ভূমিহীনকে ৩২৩ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ৫৫৫ জন ভূমিহীনকে ৭৮ একর খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে গুচ্ছগ্রাম এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার ১০৭১টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র এই অগ্রাধিকার প্রকল্পকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে এ জেলার সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসিত করা হবে ।

১০. সেবা প্রদানে ডিজিটালাইজেশনঃ 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ‘ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন থেকে জনসাধারণকে যেসব সেবা প্রদান করা হয়ে থেকে তার মধ্যে বেশ কিছু সেবা যেমন রেকর্ড রুম থেকে পর্চা প্রদান, সকল ধরনের ডিলিং লাইসেন্স নবায়ন, দাপ্তরিক যোগাযোগ, ই-মিউটেশন প্রচলিত ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার মাধ্যম প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাটবাজার ব্যবস্থাপনার জন্য ‘অনলাইন চান্দিনা ভিটি ও ভিপি সম্পত্তি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’, এবং ‘স্মার্ট আর্মস লাইসেন্স ম্যানেজমেন্ট’ শীর্ষক প্লাটফর্ম প্রস্তুত করা হয়েছে। লক্ষ রয়েছে জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত সকল সেবার ডিজিটাইজেশন করা। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে কাজ করে চলেছে। করোনা মহামারীতে দাপ্তরিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে করোনা আক্রমণের শুরু থেকেই সেমিনার, আলোচনা সভা, মাসিক বিভিন্ন সভা, গণশুনানিসহ জেলা প্রশাসনের সকল কার্যক্রম অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয়।

১১. ই-নথিতে সাফল্যঃ 

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর অত্যন্ত সাফল্যের সাথে ই-নথিতে সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের তৎপরতায় জেলা প্রশাসন, ফরিদপুর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত টানা ০৬ বার এ ক্যাটাগরির ২৫টি জেলার মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশঃ ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়ন এবং জনগণের দোরগোড়ায় সহজে ও স্বল্পতম সময়ে সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকল দাপ্তরিক কার্যক্রম হার্ডফাইলের পরিবর্তে ই-নথিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে।

১২. ফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল: 

বাংলাদেশের প্রথম  কয়েকটি জেলার মধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাবের পরপরই যখন সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় ফরিদপুরে তখন জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষকদের সাথে একটি ভার্চুয়াল মিটিং করা হয় এবং জেলা প্রশাসকের উদ্দীপনার মাধ্যমে সেখানে সিদ্ধান্ত হয় ফরিদপুরে একটি অনলাইন ভিত্তিক স্কুল খোলার, যেটির নামকরণ করা হয় ফরিদপুর ভার্চুয়াল স্কুল এবং বাংলায় আমার ঘরে আমার স্কুল। প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সর্বত্র ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে এই স্কুলের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ সকল শিক্ষকগন বিষয়ভিত্তিক সিলেবাস প্রণয়ন করেন এবং একটি সিলেবাস সম্পূর্ণ করতে যতগুলি ক্লাস নেওয়া প্রয়োজন ততগুলি ক্লাস সরাসরি অনলাইনে গ্রহণ করছেন এবং শিক্ষকগণের পাঠদানের সেই ভিডিওগুলি যারা সরাসরি দেখতে পারে না তাদের জন্য একটি ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে এবং সেই ওয়েবসাইটে ভিডিওগুলো আপলোড করা হয়েছে। একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে সেখানেও ভিডিওগুলি সংরক্ষণ করা হয়েছে যাতে করে শিক্ষার্থীরা তাদের সুবিধামতো সময়ে সেই ভিডিও গুলি দেখতে পারে। এসবের পাশাপাশি শিক্ষকদের পাঠদানের ভিডিও স্থানীয় চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে অর্থাৎ যে সমস্ত শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সেবা নেই তারা যেন অন্ততপক্ষে টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষকদের নেয়া  ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে এবং তার প্রয়োজনীয় শিক্ষা সেখান থেকে গ্রহণ করতে পারে। যেসকল গ্রাম পর্যায়ে এই সেবা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পালাক্রমে তাদের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি ভিজিট করছে এবং শিক্ষার্থীদেরকে গ্রুপে বিভক্ত করে যে কোন এক জায়গায়/বাড়িতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে শিক্ষাদান করছেন এবং নিয়মিত সেই পাঠ কার্যক্রম তদারকি করছেন। এর ফলে ফরিদপুরে শিক্ষা কার্যক্রম অনেকাংশেই স্বাভাবিক রয়েছে। এপ্রিল-মে মাসে গৃহীত ফরিদপুরের এই কার্যক্রম খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং তা পরবর্তীতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

১৩। উদ্যোক্তা মেলা:

বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার প্রভাবে অনেক মানুষ যখন কর্মহীন হয়ে পড়ে তখনই ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে স্থানীয় শিক্ষিত তরুন তরুনীরা বিভিন্ন কর্মে মেতে ওঠে। তারা স্থানীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের ঘরে বিভিন্ন পণ্য উৎপন্ন করে এবং তা অনলাইনের মাধ্যমে বিপণনের ব্যবস্থা করে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আসার সাথে সাথে তিনি দুই গ্রুপে প্রায় চার শতধিক উদ্যোক্তার সাথে মিলিত হন এবং তাদেরকে সকল ধরনের সহযোগিতা, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান করার ব্যবস্থা করেন। এতে করে উদ্যোক্তাদের মধ্যে ব্যাপক আশার আলো সঞ্চারিত হয় এবং তারা তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে আরো বেগবান করার জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে উঠেছেন। এক্ষেত্রে করোনা অনেকের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। যিনি একসময় কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন তিনিই এখন কর্ম সৃজন করছেন এবং অন্যের কর্মসংস্থান করছেন।

১৪। উন্মুক্ত গণশুনানি

প্রায় প্রতিটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কখনো জেলা প্রশাসকের কক্ষে অথবা সম্মেলনকক্ষে সপ্তাহের প্রতি বুধবার গণশুনানি হয়ে থাকে। ফরিদপুরও এর থেকে ব্যতিক্রম ছিল না। কিন্তু অতুল সরকার অনেকটা নিয়ম তান্ত্রিকতার বাইরে গিয়েও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় আগত জনগণ যাতে কোনোরূপ বাঁধাবিঘ্ন ছাড়াই জেলা প্রশাসকের সাথে মন খুলে তাদের অভাব-অভিযোগের কথা বলতে পারেন সেজন্য নিয়মিত গণশুনানির বাইরেও উন্মুক্ত গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে এবং সাথে সাথেই সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অভাব অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হচ্ছে এবং যেটি তাৎক্ষণিক সম্ভব হচ্ছে না তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করছেন যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। প্রশাসন জনগণের দোরগোড়ায় থাকবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার সার্থক রূপায়নের জন্য জেলা প্রশাসক অতুল সরকার প্রায়শই বিভাগীয় বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে করে নিয়ে কখনো উপজেলা পর্যায়ে, কখনো ইউনিয়ন পর্যায়ে এ ধরনের উন্মুক্ত গণশুনানিতে অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে মানুষের অভাব অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিক তা সমাধানের চেষ্টা করে থাকেন। এ কারণে সমগ্র ফরিদপুরে জেলা প্রশাসকের সাথে স্থানীয় মানুষের এক ধরনের আত্মিক সম্পর্কের তৈরি হয়েছে, সৃজিত হয়েছে একটি আস্থার জায়গা। দিনকে দিন তিনি পরিণত হচ্ছেন অসহায় নিপীড়িত মানুষের প্রাণের মানুষ হিসেবে।

১৫। জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা একাডেমি (DLMA):ইউনিয়ন ভূমি সহকারী, উপসহকারী, সার্ভেয়ার, কানুনগো, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সহ ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের জন্য দেশের কোথাও সমন্বিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। উপযুক্ত একাডেমিক ও প্রায়োগিক তথা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ না থাকায় জেলা পর্যায়ের ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের মাঝে মধ্যে এক ধরনের স্থবিরতা ভর করে। এই অবস্থা হতে উত্তরণের জন্য এ জেলার সদরপুর উপজেলায় ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য ০৫.০০ একর জায়গা নিয়ে ‘জেলা ভূমি ব্যবস্থাপনা একাডেমি’ নামে একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়েই সরকারি খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হবে না। স্থানীয় ০১নং খাস খতিয়ানের জমিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে বৃক্ষরোপণ, বাগান সৃজন ও প্রশিক্ষণ কক্ষ নির্মাণ করে এই একাডেমি গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে বছরে কমপক্ষে ০২ বার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্যাম্প করে ভূমি ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উজ্জিবনী প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করা হবে। এতে করে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের মধ্যে কাজের উদ্যম বৃদ্ধি পাবে এবং অপরদিকে পারস্পারিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সার্বিক ভূমি ব্যবস্থাপনার অধিকতর উন্নতি সাধিত হবে। ইতিমধ্যে বিষয়টি অনুমোদনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। 

১৬। মুজিববর্ষ পার্ক এবং বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ গ্রন্থগার নির্মাণঃ মুজিববর্ষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর জেলার প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা পরিষদের নিজস্ব জায়গায় অথবা উপজেলা পরিষদকে ঘিরে মুজিববর্ষ পার্ক নামে দৃষ্টিনন্দন পার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যা ইতিমধ্যে এ জেলার কয়েকটি উপজেলায় প্রায় সমাপ্তির পথে। এর ফলে উপজেলা পরিষদে আগত সেবাপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে সেবা গ্রহণের পাশাপাশি একটি সুন্দর পরিবেশ উপভোগেরও সুযোগ পাবেন। অনুরূপভাবে এ জেলার ৮১ টি ইউনিয়ন পরিষদে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে অব্যবহৃত কোন কক্ষে অথবা ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ গণগ্রন্থাগার’ নামে একটি করে লাইব্রেরি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যেখানে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থের সংস্থান থাকবে যাতে করে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও জ্ঞান পিপাসু জনগণ সহজেই মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে পারবে। ইতোমধ্যে ০৮ টি ইউনিয়নে এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। এই বিশেষ উদ্যোগ গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বিকাশের পথকে অধিকতর অবারিত করবে মাদক, সন্ত্রাস ও ধর্মান্ধতা প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। 

১৭। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গ্যালারীঃ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্মৃতি বিজড়িত ফরিদপুর একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। এবছর মুজিববর্ষে জেলা প্রশাসন, ফরিদপুরের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহে মেমোরিয়াল, স্মৃতি কমপ্লেক্স স্থাপনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। 

এ প্রেক্ষিতে ঐতিহ্যবাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফরিদপুর-এ একটি নান্দনিক ও শৈল্পিক কর্মসমৃদ্ধ ‘বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ গ্যালারী’ শিরোনামে একটি দ্বিতল বিশিষ্ট কমপ্লেক্স গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যেখানে ফরিদপুরের ইতিহাস ও রাষ্ট্র পরিচালনা সংক্রান্ত গ্রন্থসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দেশ বরেণ্য লেখক, কবি ও সাহিত্যিকদের বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সংক্রান্ত গ্রন্থের এবং ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার অডিও ও ভিজুয়াল উপস্থাপনার সন্নিবেশ ঘটানো হবে। এই গ্যালারীর মাধ্যমে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও জ্ঞানপিপাসু জনগণ একদিকে যেমন বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে, অপরদিকে সচিত্র ডিজিটাল উপস্থাপনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাণবন্ত প্রতিচ্ছবি পর্যবেক্ষণেরও সুযোগ পাবেন। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে স্থানীয়ভাবে কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং উক্ত গ্যালারীর একটি দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনও প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবে রূপদানের উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র সকল প্রচেষ্টা শতভাগ সফল করার লক্ষ্য নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের নেতৃত্বাধীন টিম ফরিদপুর। সম্ভবত বাংলাদেশের অন্যান্য জেলাতেও একই ধরনের উন্নয়নযজ্ঞ শুরু হয়েছে। কিন্তু মাত্র এক বছরের মধ্যে জেলা প্রশাসক অতুল সরকার কর্তৃক যে সকল ব্যতিক্রমী ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করা হয়েছে তা যে কোন বিচারে অনন্য প্রশংসার দাবিদার। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা তাদের সততা, সাহসিকতা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে নির্মোহভাবে জনগণ তথা রাষ্ট্রের সেবা করবেন এমনটিই সকলের প্রত্যাশা। শুভকামনা জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও তার টিম ‘টিম ফরিদপুরে’র জন্য। 

বঙ্গবাণী/এমএস