ঢাকা, ২০ জুন, ২০২৫ | আষাঢ় ৭ ১৪৩২
ঢাকা, ২০ জুন, ২০২৫       
Shruhid Tea

কাউকে প্রপোজ করা কি অন্যায়?

মো. শরিফুল ইসলাম। বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ২০:০৪, ১৯ জুন ২০২৫

কাউকে প্রপোজ করা কি অন্যায়?

মো. শরিফুল ইসলাম

আজকের সমাজে এক অদ্ভুত দ্বিচারিতা লক্ষ্য করা যায়: যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে একদিকে সম্পর্ক গড়ে তোলার পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হয়, আবার সেই স্বাধীনতা প্রয়োগের চেষ্টায় যদি কাউকে পছন্দ করে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তখন তা সামাজিক বিদ্রুপ বা হেনস্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই অসঙ্গতি কেবল অযৌক্তিক নয়, বরং তা ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘনের সামিল।

একটি মৌলিক প্রশ্ন : কাউকে প্রপোজ করা কি অন্যায়?

না। কেউ যদি একজন নারীকে শালীন, ভদ্র ও সম্মতিপূর্ণ ভাষায় নিজের ভালো লাগার কথা বলে, সেটা প্রেমের হোক, চুম্বনের হোক কিংবা যৌন আকাঙ্ক্ষার প্রকাশই হোক: তা কখনোই নিজের মধ্যে অপরাধমূলক নয়। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং কথিত নারীবাদ এসবের অনুমতি দেয়। বরং এই মূল্যবোধে মূল নীতি হচ্ছে : যা কিছু সম্মতিপূর্ণ, তা বৈধ

'না' মানে 'না'

জোর করা, ভয় দেখানো বা হ্যারাসমেন্ট অপরাধ

সুতরাং, কেউ যদি কোনো প্রস্তাবে রাজি না হয়, তাহলে সেটা মান্য করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেউ যদি শুধুমাত্র একটি প্রস্তাব দেওয়ার কারণে সামাজিক লাঞ্ছনার শিকার হন, তাহলে সেটাও অন্যায়। কারণ একটি বিনীত প্রস্তাব কোনোভাবেই অপরাধ নয়, যতক্ষণ না তাতে সম্মতি লঙ্ঘন নেই।

যৌক্তিক প্রশ্ন : পাশে থাকবেন, মিশবেন, মিছিল করবেন, আর প্রস্তাবে বিরক্ত হবেন?

এই সমাজে নারী-পুরুষ একত্রে হাঁটে, মিছিলে অংশ নেয়, আড্ডা দেয়, ঘুরে বেড়ায়; তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ অবিচ্ছেদ্য। এখন, যদি একজন পুরুষ নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে চান, সেটা যদি ভদ্রতা ও সীমার মধ্যে থাকে, তাহলে কেন সেটি ‘ক্রাইম’ হয়ে যাবে?

একজন পুরুষ স্বভাবগতভাবেই নারীর প্রতি আকৃষ্ট হয়, এটা তার হরমোনগত ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। ইসলাম এটিকে স্বীকৃতি দিয়ে পুরুষকে চারটি পর্যন্ত বিয়ের অনুমতি দিয়েছে, কারণ তার মধ্যে আবেগ প্রকাশের প্রবণতা বেশি। এই আকর্ষণ এবং তার প্রকাশকে স্বীকার না করাটাই বরং অবাস্তব।

যে আইনের আশ্রয় চাইবেন, সেটিকে মেনে চলতে হবে

আজ যারা ধর্মীয় আইনকে 'মধ্যযুগীয়' বলে বাতিল করেন, তারাই আবার কোনো সম্পর্কীয় সমস্যায় পড়লে ইসলামী শাস্তি চান! এটা এক ধরনের সুবিধাবাদ। আপনি যদি পশ্চিমা আইনকে মেনে চলেন, তবে তার নিয়মমাফিক স্বাধীনতাও মানতে হবে। আর আপনি যদি ইসলামি শরিয়াকে মানেন, তাহলে তার নিয়ন্ত্রিত পর্দা ও সামাজিক রীতিও মানতে হবে। আধা আধা আইন মানলে সমস্যা হবেই।

সুতরাং, আপনি যদি চান কেউ আপনার দিকে আকৃষ্ট না হোক, তাহলে নিজেও শরিয়ত অনুযায়ী জীবনযাপন করুন। আর যদি সমসাময়িক সামাজিক মেলামেশাকে স্বাভাবিক বলেন, তাহলে সেই মেলামেশার প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া: আকর্ষণ ও প্রস্তাবকেও মেনে নিতে হবে।
 

নৈতিকতার দ্বৈত মানদণ্ড পরিত্যাজ্য

একটি প্রস্তাব মানেই অপরাধ নয়। এটি একটি পার্সোনাল স্পেসের বিষয়। কেউ গ্রহণ করতে পারেন, নাও করতে পারেন। কিন্তু সেই প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে কাউকে অপদস্থ করা, ফেসবুকে হেনস্তা করা, বা সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত করা অন্যায়, অন্যায্য এবং বেআইনি।

যদি আপনি সত্যিই সমাজে শালীনতা চান, তবে ইসলামি শরিয়া ও পর্দার আইন মেনে চলার বিকল্প নেই। আর যদি আপনি আধুনিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করেন, তাহলে ব্যক্তি স্বাধীনতার ন্যায্য প্রয়োগে বাঁধা দেওয়ার অধিকার আপনার নেই।

সরাসরি বললে, আপনি যদি 'পশ্চিমা ফ্রেম' এ খেলেন, তাহলে খেলাটাও পুরো খেলতে হবে। নিয়মের সুবিধা নিয়ে নিয়মকে পেছনে ফেলা যায় না।

এই লেখা সম্পূর্ণ লেখকের নিজের মতামত। এত কতপক্ষের কোনো দায় নেই।

লেখক- মো. শরিফুল ইসলাম, চেয়ারম্যান, ইনসাফ গ্রুপ।