ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪ | বৈশাখ ১২ ১৪৩১
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪       
banner

গুলশানে স্পা সেন্টারের নামে যেভাবে হতো দেহ ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

গুলশানে স্পা সেন্টারের নামে যেভাবে হতো দেহ ব্যবসা

ছবি-সংগৃহীত

ঢাকার গুলশানে আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধে বুধবার অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। এ সময় গুলশান ২ এর ৪৭ নম্বর রোডের একটি বাড়িতে অবৈধ স্পা সেন্টারের সন্ধান পাওয়া যায়। সেখানে অভিযান চালাতে গেলে দুই তরুণী ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়েন। 

এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ঐ স্পা সেন্টার থেকে পরে সাতজনকে আটক করা হয়। নিহত তরুণীর নাম ফারজানা আক্তার (১৯)। আরেকজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। 

নিহত তরুণীর মৃত্যুর পর স্পা সেন্টারটি কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, কত জন নারী সেখানে কাজ করতেন আর স্পা সেন্টারটির মালিক কে তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে গুলশানের মতো অভিজাত এলাকায় স্পা সেন্টারে কীভাবে দেহ ব্যবসা চলতো তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ৩-৪ চার বছর আগে হাসান নামে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি ভবনটির চার তলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। সেই ফ্ল্যাটে তার স্ত্রী পায়েলকে দিয়ে স্পা সেন্টারটি পরিচালনা করে আসছিলেন হাসান। মূলত সেখানে স্পা সেন্টারের আড়ালে চলতো দেহ ব্যবসা। আগে একাধিক বার হাসানের স্পা সেন্টারটিতে অভিযান পরিচালনা করেও সেটি বন্ধ করা যায়নি। এছাড়া হাসানের চলাফেরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকায় তাকে এ বিষয়ে ভয়ে কিছু বলতে পারতেন না ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের মালিকরা।

অভিযানের শুরু থেকে শেষ

প্রত্যক্ষদর্শী ও অভিযান সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বুধবার দুপুর ২টার দিকে ডিএনসিসির একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এপিবিএনসহ ডিএনসিসির একটি দল ৬ তলা ভবনটিতে প্রবেশ করে। আবাসিক ভবনের নামে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে— এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ভবনটিতে অভিযান পরিচালনা করে ডিএনসিসি। অভিযানের একপর্যায়ে ভবনের চার তলার স্পা সেন্টারে প্রবেশ করে আভিযানিক দল। এদিকে অভিযানের কথা শুনে স্পা সেন্টারে কর্মরত নারীরা পালানোর জন্য বিভিন্ন রাস্তা খুঁজতে থাকেন। এ সময় ফারজানা ও তার দুই নারী সহকর্মী অভিযানকারী দল থেকে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে ভবনের বাম পাশের একটি কক্ষের এসির কম্প্রেসারের ফাঁক দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় ফারজানা ও তার আরেক সহকর্মী এসি কম্প্রেসারের ফাঁক দিয়ে পাশাপাশি থাকা দুটি ভবনের নিচের ফাঁকা জায়গায় পড়ে যান। তাদের তৃতীয় সহকর্মী এসির কম্প্রেসারের ফাঁকে আটকে থাকেন। পরে তাকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে জীবিত উদ্ধার করেন। অন্যদিকে ফারজানা নিচে পড়ে যাওয়ায় তার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, এ কারণে তিনি হাসপাতালে মারা যান।

ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা একজন প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আভিযানিক দলটি ভবনে প্রবেশ করার ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে উপর থেকে নিচে কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে আমরা দৌড়ে যাই। আমরা ভবনের বাম পাশের নিচের খালি জায়গায় গিয়ে দেখি, পাশাপাশি দুই ভবনের মাঝে দুই নারী পড়ে আছেন। এদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটে রক্ত বের হচ্ছিল, অন্যজন গুরুতর আহত হয়ে কাতরাচ্ছিল। তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের ধরাধরি করে নিয়ে আসে। এর প্রায় ৩০ মিনিট পর থানা পুলিশ এলে ওই দুই নারীকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে স্পা সেন্টার থেকে ৮-১০ জন নারীকে গাড়িতে তুলে নিয়েও যায় অভিযানকারী দলটি।

স্পা সেন্টারের আড়ালে চলতো দেহ ব্যবসা

ভবনটির বিভিন্ন অফিসে কর্মরতরা ও গার্ডরা জানান, ইশরাত নামে এক নারী ক্রয় সূত্রে ৪ তলার স্পা সেন্টারটির ফ্ল্যাটের মালিক। তিনি ৩-৪ বছর আগে হাসানকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেন। ভাড়া নেয়ার পর হাসান তার স্ত্রী পায়েলকে দিয়ে এখানে স্পা সেন্টারের ব্যবসা শুরু করেন। প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত স্পা সেন্টারের কার্যক্রম চলতো।

তারা আরো জানান, স্পা সেন্টারটিতে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ জন উঠতি বয়সী নারীর আসা যাওয়া ছিল। মূলত তাদের দিয়েই হাসান ও পায়েল স্পা সেন্টারের নামে দেহ ব্যবসা করাতেন।

এ বিষয়ে ভবনটির এক তত্ত্বাবধায়ক গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৩-৪ বছর ধরে পায়েল এখানে স্পা সেন্টারের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করে আসছিল। প্রতিদিন মেয়েরা এখানে আসত। এছাড়া প্রতিদিন নানা বয়সের পুরুষরা স্পা সেন্টারটিতে যেতেন। এই কার্যক্রম চলতো দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। এ বিষয়ে ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের মালিকরা অভিযোগ করলেও কারো কথাই শুনতেন না হাসান।

স্পা সেন্টার নিয়ে কথা বললেই হুমকি দিতেন হাসান

ভবনটিতে প্রতিদিন অফিসে করতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্পা সেন্টারের মালিক হাসান প্রভাবশালী ব্যক্তি। স্পা সেন্টারের নামে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে— এ কথা জানার পর অন্য ফ্ল্যাটের মালিকরা বিভিন্নভাবে হাসানকে বলেন এটি বন্ধ করে দিতে। কিন্তু হাসান কারো কথা শুনতেন না, উল্টো যারা বন্ধ করার কথা বলতেন তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি দিতেন। এছাড়া হাসানের লোকজন ভবনটির আশপাশে সবসময় ঘোরাঘুরি করতেন। তাদের ভয়ে লোকজন কিছু বলতে পারত না

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত