ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ | বৈশাখ ৩ ১৪৩১
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪       
banner

লিভার ভালো আছে কিভাবে বুঝবেন?

ডাঃ এম সাঈদুল হক  বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৯:৩২, ১৯ অক্টোবর ২০২০

লিভার ভালো আছে কিভাবে বুঝবেন?

লিভার হচ্ছে মানবদেহের কলিজা। খাদ্য গ্রহণের পরে হজম শক্তির কাজ সম্পন্নকরণে এর ভূমিকা অত্যাধিক। যখন দেখা যাবে... 

১. দৈনিক পর্যাপ্ত ঘুম হচ্ছে (অন্তত ৭-৮ ঘন্টা) 
২. প্রত্যহ নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা যাচ্ছে 
৩. দিনের বেলা শোওয়া হচ্ছে না 
৪. বাজে তেল ও অধিক শর্করাযুক্ত খাবার বর্জন করা হচ্ছে 
৫. পরিমিত বিশুদ্ধ ও সুষম খাবার খাওয়া হচ্ছে 
৬. মানসিক উদ্বেগ, অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তামুক্ত হয়ে হাসি খুশি, উৎফুল্ল ও উদ্দীপনাময় জীবন যাপন করা যাচ্ছে 
৭. শরীরের স্থূলাকৃতি ও বাড়তি ওজন নেই 
৮. শরীর দুর্বল লাগছে না 
৯. শরীর ম্যাজম্যাজ করা,শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করা,আলস্য,কাজে অনীহা লাগছে না 
১০. যে কোন কাজে শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যাচ্ছে 
এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেল যে----
আলট্রাসনোগ্রাফিতে --- লিভার ভালো আছে 
SGPT --- স্বাভাবিক 
Fasting lipid profile --- স্বাভাবিক 
Blood Sugar ---- স্বাভাবিক 
হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসের সংক্রমণ নেই। 

সুস্থ লিভার ও অসুস্থ লিভার

লিভার আমাদের শরীরে কি কি কাজ করে?

আমাদের শরীরের লিভারের কাজগুলো:

সকল কাজের কাজি লিভার । আপনার লিভার তিনটি প্রধান কাজ করে: 

* এটি আপনার রক্ত থেকে ক্ষতিকর জিনিস শোধন করে।
* জ্বালানী জমা করে আর বাইল নামে একটি তরল পদার্থ তৈরি করে যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কিন্তু এতা শুধু শুরু। 
* এই চমৎকার অঙ্গটি শত শত শারীরিক কার্যক্রমে অংশ নেয়।

ক্যাম্পাসের বড় অঙ্গ

শুধু আপনার দেহের চামড়া এর চেয়ে বড়। গড়ে একটি প্রাপ্তবয়স্ক লিভারের ওজন তিন পাউন্ড আর এটি যেকোন সময়ে আপনার শরীরের ১৩% রক্তকে ধারণ করতে পারে। এটি কেনাকৃতির আর এর রঙ গাঢ় লাল-বাদামি।

যদি আঘাত বা রোগ আপনার লিভারের ক্ষতি করে তাহলে সার্জনেরা এটিকে নষ্ট না করে এর চারভাগের তিনভাগ বাদ দিয়ে দিতে পারেন। কখনো কখনো এটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পূর্বের আকারের মতো করে বৃদ্ধি পেতে পারে। আর আপনার যদি নতুন লিভারের প্রয়োজন পড়ে, ডাক্তারেরা অন্য কারো লিভার থেকে এক টুকরো ব্যবহার করতে পারে—লিভার বড় হয়ে আপনার শরীরে মাপসই হয়ে যায়।

ফার্মাসিস্ট

অধিকাংশ ঔষধ আপনার লিভারের মধ্য থেকে পাস হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে, তাদের এমন করতে হয় তাহলে তারা সঠিকভাবে কাজ করতে পারে – এই অঙ্গের কিছু রাসায়নিক আছে যা কিছু ঔষধকে “সক্রিয়” করে তোলে যাতে ওগুলো কাজ করতে পারে। কতো দ্রুত এই ঔষধগুলো ভাঙ্গবে তাও এই রাসায়নিকগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবহারের পরে ওগুলোকে লিভার “নিষ্ক্রিয়” করে তোলে আর প্রস্রাব বা পায়খানার মাধ্যমে ওগুলো শরীর থেকে বের করে দেয়।

হজমকারী রস তৈরি করে

আপনার লিভার কোলেস্টেরল ব্যবহার করে একটি হজমকারী রস তৈরি করে যাকে বাইল বলে। বাইল চর্বি আর নির্দিষ্ট ভিটামিনগুলোকে ভাঙ্গে যাতে আপনার শরীর ওগুলোকে ব্যবহার করতে পারে। ছোট ছোট টিউব যেগুলোকে বাইল ডাক্ট বলা হয় ওগুলো আপনার লিভার থেকে পিত্তথলিতে বাইল বয়ে নিয়ে যায়। আপনার ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রয়োজন পড়ার আগ পর্যন্ত ওগুলো পিত্তথলিতে জমা থাকে।

পুষ্টির কেন্দ্র

আপনার ক্ষুদ্রান্ত্র খাবার থেকে পুষ্টি–যেমন চিনি, গ্লাইসেরল, অ্যামিনো এসিড, ভিটামিন, খনিজ, লবন গ্রহন করে আর বিশেষ কোষের মাধ্যমে আপনার রক্তে ওগুলোকে পাঠিয়ে দেয়।

প্রথম কেন্দ্র হিসেবে আপনার লিভার ওগুলোকে এমন রূপে তৈরি করে যাতে আপনার শরীর ওগুলোকে ব্যবহার করতে পারে। এরপরে ওগুলোকে মজুত করে রাখে। এর মধ্যে লৌহ, ফোলেট, আর ভিটামিন এ, ডি, এবং বি১২ রয়েছে। আর শরীরের যখন যেখানে ওগুলোর প্রয়োজন পড়ে সেখানে ওগুলোকে পাঠিয়ে দেয়।

খাবার শোধনকারী

আপনার অন্ত্রের রক্ত বিষাক্ত জিনিস বহন করে। আপনার শরীর একবার যা ব্যবহার করে তা আলাদা করা হয়, পরিত্যক্ত যা থাকে তা আপনার লিভার ভেঙ্গে ফেলে যাতে তা আবর্জনা হিসেবে বের করে দেয়া যায়। এই ময়লা বাইলে ভ্রমণ করে আপনার পায়খানার সঙ্গে বের হয়ে যায়, বা তা আপনার রক্তে চলে যায়, তারপরে তা আপনার কিডনি’তে যায় আর প্রস্রাবের সঙ্গে আপনার শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

কেন্দ্রীয় বিষ নিষ্ক্রিয়করণ

খাবারে বিষ যেমন: মদ, কীটনাশক, এবং ভারী ধাতুর বিষ আপনার লিভার ভেঙ্গে ফেলে আর সেগুলোকে নির্দোষ আবর্জনায় পরিবর্তন করে যা সহজেই শরীর থেকে বের করে দেয়া সম্ভব। আমাদের স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রম যেমন হরমোন তৈরির পরেও বিষাক্ত জিনিসগুলো উদ্বৃত্ত হিসেবে থাকে।

নিরাপত্তারক্ষী

বিষাক্ত জিনিস শোধন করার সাথে সাথে আপনার লিভার খাদ্যের মাধ্যমে আপনার শরীরে প্রবেশকারী ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অন্যান্য জীবাণু খুঁজে পায়, ধরে এবং ধ্বংস করে। এর সবচেয়ে বেশি রোগপ্রতিরোধকারী সৈন্য (ফ্যাগোসাইট) আছে যা জীবাণু খেয়ে ফেলে আর প্রয়োজনে পুরোপুরি-প্রস্ফুটিত রোগপ্রতিরোধকারী প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।

মস্তিষ্ক ধারালো করে

আপনার রক্ত থেকে বিষাক্ত দ্রব্য বের করে দিয়ে আপনার লিভার আপনাকে সরাসরি চিন্তা করতে দেয়। যখন এটি তার নিজের কাজ করতে পারে না, তখন এইসব রাসায়নিকেরা আপনার মেজাজ, ঘুমের অভ্যাস, এবং আপনার কাজ পরিবর্তন করতে পারে। আপনার খারাপ লাগতে পারে বা দু:শ্চিন্তা অনুভব করতে পারেন বা আপনি কঠিন সময় অনুভব করতে পারেন। আপনার হাত কাঁপতে পারে, মাংশপেশি ঝাঁকি মারতে পারে, আর কথা বলা বেধে যেতে পারে। এর জন্য কোন বিষাক্ত পদার্থ দায়ী তা জানার জন্য বিজ্ঞানীরা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন।

তেলের ট্যাংক

রক্তের চিনি নামে পরিচিত গ্লুকোজ আপনার শরীরে মুহূর্তের মধ্যেই শক্তি যোগায়। আপনার লিভার এক দিনের প্রয়োজনীয় গ্লুকোজ গ্লাইকোজেন রূপে সংরক্ষণ করে। যদি আপনি অনেকক্ষণ ধরে না খান ও আপনার রক্তে চিনির পরিমান খুব কমে যায় আপনার লিভার থুক দ্রুত এটিকে গ্লুকোজে পরিণত করে। ধরুন, আপনি যখন ঘুমিয়ে থাকেন তখন আপনার শরীরে এমনটা ঘটতে থাকে।

শক্তির কারখানা

আপনার লিভার আপনার শক্তির উৎসগুলোতে ভারসাম্য রাখে। এটি দ্রুত তেলের (গ্লুকোজ) একটি বড় মজুতখানাই নয় এটি হজম করা খাদ্য থেকে এমিনো এসিড গ্রহন করে আর সেগুলোকে ফ্যাটি এসিডে পরিণত করে। যখন আপনার শরীরে গ্লুকোজ ফুরিয়ে যায় আপনার লিভার গিয়ার পরিবর্তন করে আর ফ্যাটি এসিডকে পরিবর্তন করে আরেকটি শক্তি কেটনে রূপান্তরিত করে।

রাসায়নিক কারখানা

আপনার লিভার পুষ্টি ব্যবহার করে আপনার শরীরের প্রয়োজনীয় শত শত জিনিস তৈরি করে। অন্যান্য জিনিসের মধ্যে আপনার খাওয়া খাবার লিভার ভেঙ্গে ফেলে, এমিনো এসিডকে দরকারী আমিষে রূপান্তরিত করে, শরীরের বিভিন্ন যায়গায় ভিটামিন পাঠায় আর রক্তে দলা বাধতে সাহায্য করে যাতে আঘাত পেলে আপনার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ না হয়।

ব্যর্থ করা

যখন আপনার শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা ভাঙ্গে তখন আপনার শরীরে বিলিরুবিন নামে একটি বর্জ্য পদার্থ তৈরি হয়। আপনার লিভার আপনার শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ দূর করে। যদি আপনার লিভার ভালোভাবে কাজ না করে তাহলে আপনার শরীরে প্রচুর বিলিরুবিন তৈরি হতে পারে যা জন্ডিসের সৃষ্টি করে। এটি আপনার ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ করে ফেলে।

ডাঃএম.সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক,লিভার বিভাগ
লিভার,গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজী ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ

বঙ্গবাণী/এমএস

লাইফস্টাইল বিভাগের সর্বাধিক পঠিত