ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪ | চৈত্র ১৫ ১৪৩০
ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪       
banner

সেই বিতর্কিত ওসি আশিকুজ্জামানের বদলি

নুরুল ইসলাম, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ২ এপ্রিল ২০২২

সেই বিতর্কিত ওসি আশিকুজ্জামানের বদলি

সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান

ফরিদপুরের সালথা থানার বিতর্কিত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশিকুজ্জামানকে ঢাকা আর্মড পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বদলি করা হয়েছে। ওই আদেশে তাকে আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। ফরিদপুরের সহকারি পুলিশ  সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) সুমিনুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ওসি মো. আশিকুজ্জামান সালথা থানায় ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল যোগদান করেন। তার যোগদানের পরদিন ৫ এপ্রিল লকডাউনের মধ্যে সালথা এলাকায় জরিমানা আদায় নিয়ে জনগণ, মেজিষ্ট্রেট ও পুলিশের সাথে সংঘর্ষ হয়। সে ঘটনায় সালথার গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে সালথা ইউএনও অফিস ও বাসভবন, ভূমি অফিস, সালথা থানা ও উপজেলা ভবনে তান্ডব চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে উপজেলা পরিষদে হামলা অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মোট আটটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলার বাদী পুলিশ। ওই মামলাগুলিতে আসামি হিসেবে নাম দেওয়া বা না দেওয়া নিয়ে ওসির বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার অভিযোগ শুনে আসা হচ্ছিল।

গত ২৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার ৬ নম্বর আমলী আদালতে ওসির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, হুমকি ও মারপিটের অভিযোগে একটি মামলা করের সালথার গট্টি ইউনিয়নের দুই নম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুরাদ মোল্লা বাদী হয়ে একটির মামলা করেন। ওই মামলায় ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. হান্নানকে আসামি করা হয়।

মামলায় বাদী  সালথা থানার ওসি মো. আশিকুজ্জামান ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হান্নানের বিরুদ্ধে মারধর, চাঁদাবাজি ও হুমকি-ধমকির অভিযোগ তুলেছেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।

এজাহারে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১১ নভেম্বর ইউপি নির্বাচনের আগে ওসি আশিকুজ্জামান তার কাছে বিভিন্ন সময় চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দেন। সে সময় তিনি ওসিকে ৭৫ হাজার টাকা দেন। পরে আরও ১ লাখ টাকা চাইলে তা তিনি দেননি।

বাদীর অভিযোগ, এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তার নামে তিনটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। গত ১৪ মার্চ মধ্যরাতে তার ভাই জিহাদকে ঘর থেকে তুলে থানায় নিয়ে যান ওসি। পরদিন তিনি থানায় গিয়ে এর কারণ জানতে চাইলে ওসি তাকে ২৫ হাজার টাকা দিতে বলেন। না দিলে মিথ্যা মামলা দিয়ে জিহাদকে কারাগারে পাঠানোর হুমকি দেন। তিনি টাকা না দিয়ে ফিরে যান।

মুরাদ আরও অভিযোগ করেন, ওসির নির্দেশে এসআই হান্নান তার ভাই জিহাদকে থানায় নির্যাতন করেন। মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। জামিন নিয়ে গত ২৩ মার্চ জিহাদ মুক্ত হলেও মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমনকি চলাফেরাও করতে পারছিলেন না। পরে তাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তার ভাই চিকিৎসাধীন রয়েছে।

২৭ মার্চ আদালত অভিযোগটি  পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করার নিদের্শ দেওয়ার  পাশাপাশি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি ও ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্তের আদেশ দেন।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, পুলিশ ইতিমধ্যেই ওসি আশিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।

তবে ওসি আশিকুজ্জামান বলেন, তার এ বদলি স্বাভাবিক। শাস্তিমূলক নয়। আমি নিজে প্রায় চার মাস আগে বদলির জন্য আবেদন করেছিলাম। তিনি বলেন, তার ওই আবেদনের প্রেক্ষিতেই এ বদলির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

চাঁদাবাজি মামলার সাথে কোন সম্পৃক্ততা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঐ মামলার তদন্ত চলছে। তার সাথে বদলির কোন সম্পৃক্ততা নেই।

ফরিদপুরের সহকারি পুলিশ সুপার সুমিনুর রহমান বলেন, ওসি আশিকুজ্জামানের বদলির আদেশ গত শুক্রবার রাতে পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, তিনি প্রায় চার মাস আগে বদলির জন্য আবেদন করেছিলেন সালথা থানার ওসি। এটা নিয়মিত বদলি আদেশ। আগামী ৯ তারিখের মধ্যে এখান থেকে রিলিজ নিয়ে ঢাকায় আমর্ড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন হেড কোয়ার্টারে যোগদান করতে বলা হয়েছে। 

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত