ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪ | চৈত্র ১৪ ১৪৩০
ঢাকা, ২৯ মার্চ, ২০২৪       
banner

ডানা না ঝাপটিয়েই ১০০ মাইল উড়ে বেড়ায় এই পাখিরা

ফিচার ডেস্ক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ৯ অক্টোবর ২০২০

ডানা না ঝাপটিয়েই ১০০ মাইল উড়ে বেড়ায় এই পাখিরা

শকুন

ডানা মেলে না ঝাপটালে পাখিরা তো আকাশে উড়তে পারে না। তবে জানেন কী? একবারও ডানা না ঝাপটিয়ে আন্দিজের শকুন পাড়ি দিতে পারে ১০০ মাইল। পাখিগুলো তাদের ওড়ার পুরো সময়ে মাত্র এক শতাংশ সময় ডানা ব্যবহার করে, এমনকি এই এক ভাগও ব্যবহার হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আকাশ থেকে নামার কাজে।

শুধু বাতাসে ভর করে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎকায় পাখি, আন্দিজের কনডোর শকুন দীর্ঘ সময় ধরে আকাশে উড়তে পারে। এক উড়ালে বাতাসে ভেসে থেকে ১০০ মাইল পাড়ি দেয় একবারও ডানা সঞ্চালন না করে।

১৫ কেজি ওজনের এবং ৩ মিটার (১০ ফুট) দৈর্ঘ্যের বিশাল ডানার দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের আন্দিজ পর্বতমালা অঞ্চলের পাখি।

প্যাটাগনিয়ায় প্রথমবারের মতো একদল বিজ্ঞানী আন্দিজ কনডোরের ওড়ার সময় ডানা ওঠা-নামার হার নিয়ে একটি গবেষণা করেন। তারা ৮টি পাখির শরীরে রেকর্ডিং সরঞ্জাম ডেইলি ডায়রিজ বেঁধে দেন। 

এই গবেষণা থেকে অবিশ্বাস্য তথ্য বেরিয়ে আসে। পাখিগুলো তাদের ওড়ার পুরো সময়ে মাত্র এক শতাংশ সময় ডানা ব্যবহার করে। এমনকি এই এক ভাগও ব্যবহার হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আকাশ থেকে নামার কাজে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ৮টি পাখির মধ্যে একটি একবারও ডানার ব্যবহার না করে ৫ ঘণ্টা ধরে ১০০ মাইলের (১৬০ কিলোমিটার) বেশি দূরত্ব উড়ে বেড়িয়েছে।

ওয়েলসের সোয়ানসি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর, জীববিজ্ঞানী এমিলি শেপার্ড বলেন, কন্ডোররা বরাবরই উড়তে দক্ষ, কিন্তু তারা যে এতটা দক্ষতার সঙ্গে উড়তে পারে। তা ছিল আমাদের কল্পনার বাইরে।

সোমবার প্রসিডিং অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স জার্নালে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডেভিড লেন্টিক বলেন, আন্দিজের কনডোর যে একেবারে ডানা না ঝাপটিয়ে অবিরাম উড়ে চলে, নতুন পাওয়া এই তথ্য বেশ চমকপ্রদ।

পাখিদের চোখে আকাশ শূন্য কোনো সীমাহীন দৃশ্য নয়। বরং দমকা বাতাস, উষ্ণ, আর্দ্র বাতাসের প্রবাহসহ নানারকম অদৃশ্য বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ভূদৃশ্য। ডানার ব্যবহার ছাড়া দীর্ঘক্ষণ উড়তে পারার বৈশিষ্ট্য হলো কম পরিশ্রমে লম্বা পথ উড়ে বেড়াতে পারার সক্ষমতা।

উড়ন্ত প্রাণীদের নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীদের মতে, প্রাণীরা সাধারণ দুটি পদ্ধতিতে উড়ে বেড়ায়। ডানা ঝাপটিয়ে ওড়া এবং বায়ু প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ডানার ব্যবহার না করে ওড়া। 

ইউনিভার্সিটি অব মন্টানার পাখি উড্ডয়ন বিশেষজ্ঞ ব্রেট টোবালস্কে বলেন, এই দুই ধরনের ওড়ার মধ্যে পার্থক্যটা অনেকটা প্যাডেল ঘুরিয়ে সাইকেল চালিয়ে উপরে ওঠা আর নিচে নামার মতো।

পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোয় দেখা গেছে, এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিযানের সময় সাদা সারস ও বক পাখি যথাক্রমে ১৭ শতাংশ এবং ২৫ শতাংশ সময় ডানা ব্যবহার করে।

‘বাতাসের বায়ু প্রবাহকে কাজে লাগিয়ে ডানার ব্যবহার ছাড়া এই দীর্ঘসময় উড়ে বেড়ানো আন্দিজ কনডোরের মাংসাশী খাদ্যাভ্যাসের জন্য সহায়ক। কারণ খাবারের খোঁজে দীর্ঘসময় তাদের উড়তে হয়, বলেন আর্জেন্টিনার ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব কোমাহুইয়ের জীববিজ্ঞানী সার্জিও ল্যাম্বারতুকি।

তিনি আরও জানান, আন্দিজ কনডোর যখন বৃত্তাকারভাবে উড়ে বেড়ায়, তখন বুঝতে হবে তারা বায়ুপ্রবাহ ও উচ্চচাপকে কাজে লাগিয়ে উড়ছে।

এক সপ্তাহ পরে যেন পাখিগুলোর শরীর থেকে রেকর্ডিং যন্ত্রপাতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলাদা হয়ে যায়। সেই ব্যবস্থা করেই সেগুলো সংযুক্ত করা হয়েছিল। সার্জিও ল্যাম্বারতুকি বলেন, কাজটি বেশ কঠিন ছিল। 

যন্ত্রগুলো খুলে গিয়ে নিচের আন্দিজ পর্বতমালার চূড়ায় পড়েছিল। সেসব জায়গায় আমাদের শুধু পৌঁছাতেই কখনো কখনো তিনদিনের মতো সময় লেগে যেত। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

বঙ্গবাণী/এমএস