ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪ | আশ্বিন ২৮ ১৪৩১
ঢাকা, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪       
Shruhid Tea

প্রেমিকার কাছে হিরো সাজতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্র জিতু

নিজস্ব প্রতিবেদক বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ৩০ জুন ২০২২

প্রেমিকার কাছে হিরো সাজতে শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্র জিতু

জিতু

প্রেমিকার কাছে হিরোইজম দেখাতে গিয়ে ঢাকার সাভারের আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্টাম্প দিয়ে মারধর করে ছাত্র আশরাফুল আহসান জিতু। এরপর গ্রেফতার এড়াতে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়ায় জিতু। বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ কথা জানান। 

খন্দকার আল মঈন বলেন, বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় র‌্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১ এবং র‌্যাব-৪ এর যৌথ অভিযানে গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে  জিতুকে গ্রেফতার করে। জিতু ঐ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র। সে শিক্ষা জীবনে বিরতি দিয়ে প্রথমে স্কুল, পরে মাদরাসা ও সর্বশেষ পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়। সে স্কুলে সবার কাছে একজন উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র হিসেবে পরিচিত। 

বিভিন্ন সময় শৃঙ্খলাভঙ্গ, মারামারিসহ স্কুলের পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের ইভটিজিং ও বিরক্ত করতো সে। স্কুল প্রাঙ্গণে সবার সামনে ধুমপান, স্কুল ইউনিফর্ম ব্যতিত স্কুলে আসা-যাওয়া, মোটরসাইকেল নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাফেরা করত। 

সে তার নেতৃত্বে এলাকায় একটি কিশোর গ্যাং গড়ে তোলে জিতু। পাশাপাশি গ্যাং সদস্যদের নিয়ে মাইক্রোবাসে করে যত্রতত্র আধিপত্য বিস্তার করতো। পরিবারের কাছে তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে জিতু তার গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হতো ও বিভিন্ন সময় এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে হামলা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে শোডাউন দিতো।

তিনি আরো বলেন, ঘটনার কয়েকদিন আগে ঐ স্কুলের এক ছাত্রীর সঙ্গে জিতুর অযাচিতভাবে ঘোরাফেরা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে নিহত শিক্ষক বারণ করেন। এ ঘটনায় সে তার শিক্ষকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়। ঐ ছাত্রীর কাছে নিজের হিরোইজম প্রদর্শন করতে তার ওপর হামলার পরিকল্পনা করে। 

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ জুন একটি ক্রিকেট খেলার স্টাম্প স্কুলে নিয়ে আসে এবং তা শ্রেণি কক্ষের পেছনে লুকিয়ে রাখে। নিহত শিক্ষককে আঘাত করার সুযোগ খুঁজতে থাকে। পরবর্তীতে কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলাকালীন শিক্ষক উৎপল কুমারকে মাঠের এক কোণে একাকি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিতু স্টাম্প দিয়ে অতর্কিতভাবে বেধড়ক আঘাত করতে থাকে। জিতু শিক্ষককে প্রথমে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে এবং পরবর্তীতে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতরভাবে জখম করে।

র‌্যাব জানায়, জিতু এলাকায় সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করলেও পরবর্তীতে গ্রেফতারের আশঙ্কায় সে এলাকা ত্যাগ করে। প্রথমে বাসযোগে মানিকগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত্রীযাপন করে। পরদিন সে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আরিচা ফেরিঘাটে পৌঁছায় এবং ট্রলারযোগে নদী পার হয়ে পাবনার আতাইকুলাতে তার এক পরিচিতের বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরদিন ভোরে সে আবারও তার অবস্থান পরিবর্তন করতে আতাইকুলা থেকে বাসযোগে কাজিরহাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে লঞ্চযোগে আরিচাঘাট পৌঁছায় এবং সেখান থেকে বাসযোগে গাজীপুরের শ্রীপুরে ধনুয়া গ্রামে আত্মগোপনে থাকে। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

এ ঘটনায় নিহতের বড় ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে জিতুর বয়স ১৬ দেখানো হয়। তবে র‌্যাব জানায়, তারা জিতুর সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছে। অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার বয়স ১৯ বছর।

উল্লেখ্য, শনিবার দুপুরে সাভারের হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে ছাত্রীদের ফুটবল খেলা চলছিল। প্রভাষক উৎপল মাঠের এক পাশে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন। এ সময় ঐ প্রতিষ্ঠানের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু ক্রিকেটের স্টাম্প নিয়ে এসে উৎপলকে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে আইসিউতে রাখা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে তিনি মারা যান।

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত