ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪ | বৈশাখ ১৫ ১৪৩১
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪       
banner

আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলেই স্বস্তি পাবে মেজর সিনহার পরিবার

কক্সবাজার প্রতিনিধি   বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ১৯:২২, ৩১ জুলাই ২০২১

আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলেই স্বস্তি পাবে মেজর সিনহার পরিবার

অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান

কক্সবাজার টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার এক বছর আজ। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ওই উপজেলার বাহারছড়া-শাপলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পার হলেও থমকে আছে মামলার বিচার কাজ। এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ।

এদিকে, এ হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ জড়িত সবার দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদুল আলম চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় পূর্বনির্ধারিত সময়ে সাক্ষ্যগ্রহণের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। গত ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল এ মামলার চার্জ গঠন করেন। ওই সময় ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে তা হয়নি। ভার্চুয়াল আদালত বসলে সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ জানা যাবে।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেন, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হলেই স্বস্তি পাবে আমার পরিবার। আমাদের চাওয়া হলো- দ্রুত বিচার, সন্তোষজনক রায় এবং দ্রুত রায় কার্যকর। এ চাওয়া পূরণের জন্য অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। টপ আসামি প্রদীপ কুমার দাস ও লিয়াকত আলীসহ জড়িতদের ‘ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট’ (সর্বোচ্চ শাস্তি) যেন নিশ্চিত হয় এবং বাকিরা যতটুকু অপরাধ করেছে সেই অনুযায়ী যেন আদালত সাজা দেন। পরবর্তীতে রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয় সেটাই আমাদের সবার চাওয়া।

শারমিন আরো বলেন, র‍্যাবকে আমরা ধন্যবাদ জানাই- তারা খুব অল্প সময়ে ভালো একটা চার্জশিট দাখিল করেছে। গত মাসে এ মামলার অভিযোগ গঠন হয়েছে, আনুষ্ঠানিক বিচারও শুরু হয়েছে। এখন করোনা পরিস্থিতি তো আমাদের হাতে নেই, আমরা কিছুই করতে পারব না।

মামলার প্রধান সাক্ষী বাহারছড়ার আব্দুল হামিদ বলেন, আমার চোখের সামনে একজন মানুষকে প্রকাশ্যে বিনাদোষে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমি বিবেকের তাড়নায় জীবনের ঝুঁকি জেনেও এ মামলায় সাক্ষী হয়েছি। হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই আমি।

কী হয়েছিল সেই রাতে?

মামলার এজাহারে বলা হয়, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান ও তার সহযোগী সিফাত ২০২০ সালের ৩১ জুলাই বিকেলে ডকুমেন্টারির জন্য ভিডিও ধারণ করতে নীলিমা রিসোর্ট থেকে বাহারছড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তার পাশের পাহাড়ে যান। ‘ডকুমেন্টারির প্রয়োজনেই’ সিনহার পরনে কমব্যাট টি-শার্ট, কমব্যাট ট্রাউজার ও ডেজার্ট বুট ছিল। রাত ৮টা পর্যন্ত পাহাড়ে ভিডিও ধারণ করে তারা ফিরতি পথে রওনা হন এবং রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে তাদের প্রাইভেটকার শামলাপুর চেকপোস্টে পৌঁছায়। পরিদর্শক লিয়াকতসহ পুলিশ সদস্যরা সেখানে তাদের গতিরোধ করে। ওই সময় সিনহা অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দিলে পুলিশ সদস্যরা গাড়ির সামনের বাম দিকের দরজা খুলে টেনেহিঁচড়ে সিফাতকে বের করে নিয়ে যায়। সিফাত তখন দুই হাত তুলে নিজের এবং গাড়িতে বসা সিনহার পরিচয় দেন। আসামিরা ওই সময় আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা মেজর সিনহাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। 

মামলায় আরো উল্লাখ করা হয়, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা গাড়ি থেকে নেমে দুই হাত উপরে তুলে বারবার নিজের পরিচয় দেন। ওই সময় পরিদর্শক লিয়াকত তাকে বলতে থাকে- তোর মতো বহুত মেজরকে আমি দেখছি। এইবার খেলা দেখামু। এরপর প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে মোবাইলে নিচুস্বরে কথা বলতে থাকেন লিয়াকত। এক পর্যায়ে তিনি প্রদীপকে বলেন- ঠিক আছে, শালারে শেষ কইরা দিতাছি। ওই সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেজর সিনহার শরীরের ঊর্ধ্বাংশে কয়েক রাউন্ড গুলি করেন লিয়াকত। গুলির আঘাতে সিনহা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান এবং নিজের জীবন রক্ষার জন্য ঘটনাস্থল থেকে উঠে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন অন্য আসামিরা তাকে চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। লিয়াকত আলী তখন সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরো এক রাউন্ড গুলি করেন। এরপর ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ওসি প্রদীপ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা সিনহার শরীর ও মুখে কয়েকবার লাথি মেরে তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হন এবং নিজের বুট দিয়ে নিহতের মুখ বিকৃত করার চেষ্টা করতে থাকেন।

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত