ঢাকা, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫ | কার্তিক ২২ ১৪৩২
ঢাকা, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫       
Shruhid Tea

ধর্ষণের সুষ্ঠ ও দ্রুত বিচারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

মাসুদ রানা, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি  বঙ্গবাণী

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ৪ আগস্ট ২০২১

ধর্ষণের সুষ্ঠ ও দ্রুত বিচারের দাবীতে এলাকাবাসীর মানববন্ধন

ছবি- বঙ্গবাণী

ধর্ষণের মামলা করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দাকোপ উপজেলার বানিয়াশান্তা বাজার সংলগ্ন গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা ধর্ষিতা এক নারী ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনার অভিযুক্ত হালিম মেম্বারের বিরুদ্ধে সুষ্ঠ ও দ্রুত বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। 

মঙ্গলবার দুপুরে বানিয়াশান্তা বাজারে এলাকাবাসী সম্মলিত ভাবে এ মানববন্ধনে অংশ নেন নারী-পুরুষ ও শিশুসহ প্রায় সহস্রাধিক গ্রামবাসী। এ সময় সাবেক ইউপি মেম্বার, হালিম হাওলাদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, ও বাজার সংলগ্ন ভেরীবাধ এলাকার নারীদের উত্ত্যক্ত করা এবং নারী পাচারের চেষ্টাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেন তারা। এব্যাপারে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ তদন্তকারী পুলিশের একটি দল। 

থানার মামলা সুত্রে ও এলাকাবাসী জানায়, বানিয়াশান্তা বাজারে পিতার দোকান থাকা স্বামী পরিত্যাক্তা এক নারীর সাথে সাবেক ইউপি সদস্য হালিম হাওলাদারের পরিবারিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন সময় ওই নারীকে ধর্ষণ করে আসছিল মেম্বার হালিম হাওলাদার। 

হালিম এলাকায় ক্ষমতাশিন ও প্রভাবশালী হওয়ায় দিনের পর দিন এলাকাবাসীর চোঁখ আড়াল করে ওই নারীকে ধর্ষন করে আসছিল। কিছু দিন পুর্বে এলাকাবাসী বিষয়টি আছ করতে পেরে তাতে বাঁধা দেয় বাজার কমিটির সভাপতি মোকলেছুর রহমান ও মহিলা ইউপি সদস্য আমিুরুননেছা, কিন্ত সাবেক মেম্বার হালিম এলাকায় ক্ষমতাসিন হওয়ায় কারো কথায় কর্নপাত না করে প্রায়ই ওই নারীর বাসায় আসা-যাওয়া করা অব্যাহত রেখেছিল। 

এক পর্যায় গত ২৩ জুলাই গভীর রাতে অসহায় ওই নারীকে বিয়ের কথা বলে তার বসত ঘরে গিয়ে তাকে জোর পুর্বক ধর্ষণ করে। এসময় তার আত্নচিৎকারে এলাকাবাসী ছুটে আসলে হালিম পালিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয়রা জানতে পেরে তাকে বিয়ের করার চাঁপ প্রয়োগ করে পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী। এতে সে রাজী না হয়ে ১ আগাষ্ট রাতে হালিমের সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তার ঘরে ঢুকে বিয়ের কথা বললে মেরে পশুর নদিতে ভাসিয়ে দেয়ার প্রকাশ্যে হুমকি দেয় ধর্ষক হালিম বলে নির্যাতিতা নারী থানায় দেয়া অভিযোগে উল্লেখ করে।

এছাড়াও তার পিতার জমি সরকারী অধিগ্রহন হওয়ায় বিশ্বব্যাংক থেকে ক্ষতিপূরণ, দোকান এবং বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ করে বিভিন্ন সময় বিয়ের আশ্বাস দিয়ে প্রায় ২৫ লাখ টাকা হালিম হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী। এর পরেও তাকে বিয়ে না করে উল্টো তার মেয়েকে ভারতের মুম্বাই নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেয় ইউপি মেম্বার হালিম বলে থানার মামলায় উল্লেখ করা হয়। 

স্থানীয় মুকুল বেগম নামের এক বিধবা অভিযোগ করেন, হালিম হাওলাদার উত্তক্ত্য করায় ১০ম শ্রেনী পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে ভিটা ছেড়ে বাজারের পাশে আশ্রায় নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি তার। হালিমের হাত থেকে বাচার জন্য গ্রাম ছেড়ে বাজারে আসার কারণে হালিম হাওলাদার তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে ঘর কুপিয়ে তছনছ করে এবং মারধোর করে মেয়ে ও বৃদ্ধা মহিলাকে। সাবেক মেম্বার হালিমের সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের ভয়ে স্থানীয়রা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করেন অনেকেই।

স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করেন, মৃত নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য হালিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে অস্ত্র, নাশকতা ও ধর্ষণসহ ৬টি মামলা রয়েছে বলে।

দিনের পর দিন বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ধর্ষণ করে বিয়ে না করায় সর্বশেষ গত ১ আগষ্ট নির্যাতনের শিকার ওই নারী বাদী হয়ে হালিম হাওলাদারের বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় ধর্ষণের মামলা করে। স্থানীয়রা একাত্রিত হয়ে ওইদিন রাতেই বানিয়াশান্তা বাজার থেকে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী।

বানিশান্তা বাজার বনিক সমিতির সভাপতি মোঃ মোকলেছুর সরহমান বলেন, হালিম ৫নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড শুরু করে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, নাশকতা, ধর্ষন ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রায় ৬/৭টি মামলা রয়েছে। বর্তমানের তার বিরুদ্ধে ধর্ষন মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ায় তার দলের অন্য সদস্যরা মামলার স্বাক্ষী ও বাদিনীকে বিভিন্ন রকম হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। 

স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার আমিুরুননেছা বলেন, হালিমের হাতে অনেক নারী ইজ্জাত হারিয়েছে। তার ক্ষমতার দাপটে এলাকায় একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরী করে এহেন কর্মকান্ড চালিয়েছিল হালিম। দ্রুত বিচারের আওতায় এনে ধর্ষক হালিমের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। 

ধর্ষণ মামলার সুত্রধরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে খুলনা সি সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রাশেদ হাসান সহ পুলিশের একটি দল। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় তদন্তে এসে হালিমের পুর্বের অনেক ঘটনা উদঘাটন হয়েছে। এলাকাবাসীর কাছে পৃথক পৃথক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং স্বাক্ষিদের কাছেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত সম্পুর্ণ হলে প্রতিবেদন দ্রুত আদালতে পেশ করা হবে। তবে যদি কেউ এ মামলার সাক্ষী বা বাদিনীকে কোন হুমকি এবং ভয়ভিতি দেখায়, অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে। 

বিয়ের প্রলোভনের স্বামী পরিত্যাক্তা নারীকে ধর্ষণ ও থানায় মামলার সুত্রধরে ১ আগাষ্ট রাতে বাজার থেকে সাবেক ইউপি মেম্বার হালিম হাওলাদার জেল হাজতে থাকলেও তার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। এলাকায় একজন চিহ্ণিত সন্ত্রাসী হওয়ায় কয়েক বছর পুর্বে র‌্যাবের হাতে ক্রস ফায়ারে নিহত হয় হালিম হওলাদারের পিতা নুরুল ইসলাম হাওলাদার। 

বঙ্গবাণীডটকম/এমএস

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত